দোয়া ও ইজতিমা কী?
*** ( "আমন্ত্রণ") আরবি: دعوة••••
অর্থাৎ নিজের ধর্মকে প্রচার প্রসার করা, বা ধর্মের প্রতি আহ্বান জানানো,
**দা'ওয়াহ অর্থ ও "আমন্ত্রণ" করাকে বোঝায়, **তাবলীগ অর্থ হলো:- প্রচার করা.
অর্থাৎ নিজের ধর্মেকে প্রচার করা,
একজন মুসলিম ব্যক্তি যিনি ধর্মীর বাহক হিসেবে নিজ দায়িত্বে নিজের ধর্মের হুকুম আহকামকে মানুষের কাছে প্রচারের কাজ করেন তাকে দাঈ বলা হয়--বহুবচন দুʿআত বলা হয়।
••তবে ইসলামে কখনো দাওয়াহ রাজনৈতিক বা পেট- নৈতিক কারো মনগডা কার্যকলাপ হিসেবে বিবেচিত ছিলো না এখনো নাই, তবে বিভিন্ন দল হওয়ার কারণে কিছু সময় শোনা যায় এই দাওয়াহকে রাজনৈতিক হিসেবে ও আখ্যায়িত করা হয়, তবে এই সব দলগুলোতে দাওযাহ প্রচার করার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ইসলামকে ইসলামপন্থীদের মাঝে প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা, যাতে সকালের কাছে ধর্মকে প্রচার করা যাই এবং একটি ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে দেশকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
** আর তাবলীগ সম্পর্কে যদি বুঝতে হয় তাহলে প্রথম এ আমাদের জানতে হবে তাবলীগ কতো প্রকার ও কি কি..!
প্রথমত তাবলীগ দু’প্রকার, ।
••তাবলীগে ‘আম’ বা সাধারণভাবে প্রচার করা।
••তাবলীগে ‘খাছ’ বা বিশেষভাবে প্রচার করা।
**ইজতেমা-
**আরবি: اجتماع হল :-যা একটি ইসলামিক জামাত বা সংগঠনকে বুঝানো হয় সেখানে লক্ষাদিক মুসলাম ভাই ভাই একত্রিত হয়, বিশ্বজুড়ে ইজতেমা মানে এক অন্যরকম শান্তির নাম, অপরিহার্য একটি অংশ তাবলীগ জামাত,এটি প্রতিটি মুসলমান তার জীবন পরিচালিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই লক্ষ মানুষ এই ইজতেমায় উপস্থিত হয়, জীবনকে সুন্দর করে পরিচালিত করা এবং জীবনের লক্ষ খুঁজার জন্য, কিছু ভালো আমল শিখার জন্য, বা একান্তে কিছু মুহূর্ত কাটানোর জন্য যেটা হবে শুধু আল্লাহরকে পাওয়ার উদ্দেশ্য, আল্লাহ তায়ালাকে পাওয়ার জন্য, নিজের গুনাহ ক্ষমা চাওয়ার জন্য, মনের মোহাব্বতে এতো মানুষ এই ইজতেমায় হাজির হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ইরশাদ করেছেন
اَطِیْعُوا اللهَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ، فَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّمَا عَلَیْهِ مَا حُمِّلَ وَ عَلَیْكُمْ مَّا حُمِّلْتُمْ، وَ اِنْ تُطِیْعُوْهُ تَهْتَدُوْا، وَ مَا عَلَی الرَّسُوْلِ اِلَّا الْبَلٰغُ الْمُبِیْن.
তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং তোমরা রাসূলের আনুগত্য কর। যদি তারা আনুগত্য-বিমুখ হয়, তবে নবীকে যতটুকু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তার যিম্মাদারি ততটুকুই। আর তোমাদেরকে যত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তার দায় তোমাদের উপর। ‘রাসূলের দায়িত্ব’ কেবল পরিষ্কারভাবে তাবলীগ করা-পৌঁছে দেওয়া। -সূরা নূর (২৪) : ৫৪
নবুওতের সূচনালগ্নে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
(یٰۤاَیُّهَا الْمُدَّثِّرُ، قُمْ فَاَنْذِرْ.)
হে চাদরওয়ালা! উঠুন, মানুষকে সতর্ক করুন। -সূরা মুদ্দাছছির (৭৪) : ১-২
সে অনুযায়ী বর্তমানে ও তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে প্রায় ২০০ শতের অধিক এই দাওয়াতের কাজে মেহেনত করে যাচ্ছেন মানুষের হেদায়াতের জন্য নিজেদের দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য
তাবলীগের এই কাজটা যে শুধু নিজের দেশে করছে এমন না! বর্হিঃবিশ্বে ও প্রায় ১১২টির অধিক দেশে তাবলীগ জামাতের কাজ করতেছে।
তাবলীগ জামাতের অনেক গুলো পরিভাষা রয়েছে, যথা :--তাসকিল, জুড়নেওয়ালে জামাত, গাশ্ত, চিল্লা, সাল, তালিম, বয়ান, এলান, আমির মেহনত, জিম্মাদার, জামাত, সাথী, মামুর, মোতাকাল্লেম, হযরতজী, উসুলি ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই জামাত গুলোতে একত্রিত মুসলমানদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, নেই কোনো ভেদাভেদ, কে বড়লোক বা কে গরিব এগুলা আর কোন পার্থক্য নেই এখানে সকলেই সমান। এখানে সকল মুসলিম ভাই খাবার খাওয়ার সময় হলে একসাথে বসে সহজ সরল মন নিয়ে সাধারণ রান্না ডাল খিচুরি খেয়ে নিতে ও কোনো দ্বিধা করে না কেউ,,
ইজতেমার আশেপাশে পর্দাশীল মা-বোনেরা ও অপেক্ষা করে সকাল ১০ টা থেকে যোহর পর্যন্ত মোনাজাতের অপেক্ষায়,
এই রহমাতের এতো বিশাল ইজতেমায় কারোকে কখনো ইনভাইট করে আনছে হয়না, এখনে সবাই আল্লাহকে পাওয়ার জন্য নিজ নিজ ইচ্ছায় তাদের মূল্যবান সময় থেকে সময় বের করে বিভিন্ন দেশ থেকে ৩দিনের জন্য চলে আসে।
এই সব প্যান্ডেল তৈরীর কাজে লোকদের ৩মাসের ও বেশি সময় লাগে
ধর্মপ্রাণ সকল শ্রেণীর স্বেচ্ছা শ্রমিক প্রায় ৩ মাসের অধিক সময় লাগে।
আর এই ইজতেমায় অর্থ ব্যবস্থাকারী হলো ওনারা যারা দেশ বিদেশ এ থাকে এবং যারা আর্থিক দিক থেকে বেশি ভালো।
তাবলীগ জামাতের মধ্যেমে আমাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়,ধনী আর গরিবের মধ্যে নেই কোনো ভেদাভেদ, আমরা সকালেই আল্লাহর বান্দা/ গোলাম,
তাছাড়া ও দাওয়াত-তাবলীগ, তালীম-তাযকিয়া, জিহাদ-সিয়াসত। তিনটিই আল্লাহর রাস্তা,
اُدْعُ اِلٰی سَبِیْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَ الْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَ جَادِلْهُمْ بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ .
আপনি স্বীয় রবের পথে দাওয়াত দিন হেকমত-কৌশল ও সুন্দর নসীহতের মাধ্যমে। আর (প্রয়োজন হলে) ওদের সাথে অধিকতর উত্তম পন্থায় যুক্তিতর্ক করুন।
(সূরা নাহল (১৬) : ১২৫)
হাদীসে এসেছে-
مَنْ خَرَجَ فِي طَلَبِ العِلْمِ فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللهِ حَتّى يَرْجِعَ.
যে ইলম অর্জনে বের হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায়।
(জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৪৭)
অন্য হাদীসে এসেছে-
مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللهِ هِيَ العُلْيَا، فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللهِ عَزّ وَجَلّ.
যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীন বুলন্দ করার জন্য লড়াই করে, সে আল্লাহর রাস্তায়।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৩)
পুরো দ্বীনই বরং সাবীলুল্লাহ, আল্লাহর রাস্তা।
আর দাওয়াত ও তাবলীগই হলো আল্লাহর রাস্তা।
আর এই তিন কাজকেই নবীওয়ালাদের কাজ বলে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ بَعَثَ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَة .
মুমিনদের উপর আল্লাহ বড় অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে এমন একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যিনি তাদের সামনে আল্লাহর কালাম তিলাওয়াত করে শোনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, তাদেরকে কিতাব ও হিকমতের তালীম প্রদান করেন।
(সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৬৪)
অন্য হাদীসে এসেছে-
خَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ ذَاتَ يَوْمٍ مِنْ بَعْضِ حُجَرِهِ، فَدَخَلَ الْمَسْجِدَ، فَإِذَا هُوَ بِحَلْقَتَيْنِ، إِحْدَاهُمَا يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ، وَيَدْعُونَ اللهَ، وَالْأُخْرَى يَتَعَلّمُونَ وَيُعَلِّمُونَ، فَقَالَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: كُلّ عَلَى خَيْرٍ، هَؤُلَاءِ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ، وَيَدْعُونَ اللهَ، فَإِنْ شَاءَ أَعْطَاهُمْ، وَإِنْ شَاءَ مَنَعَهُمْ، وَهَؤُلَاءِ يَتَعَلّمُونَ وَيُعَلِّمُونَ، وَإِنّمَا بُعِثْتُ مُعَلِّمًا فَجَلَسَ مَعَهُمْ.
একবার নবীজী কামরা থেকে বের হয়ে মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন মসজিদে দুটি হালকায় দ্বীনী কাজ হচ্ছিল। এক হালকার লোকেরা কুরআন মাজীদ পাঠ করছিলেন এবং দুআ করছিলেন। আরেক হালকার লোকেরা দ্বীন শিখছিলেন এবং শিক্ষা দিচ্ছিলেন। নবীজী বললেন, উভয় হালকা নেক কাজে রয়েছে। এরা কুরআন পাঠ করছে দুআ করছে। আল্লাহ চাইলে তাদের বাসনা পূরণ করবেন বা করবেন না। আর এরা দ্বীন শিখছে শেখাচ্ছে। ‘আমি তো শিক্ষক হিসাবে প্রেরিত হয়েছি’-এই বলে নবীজী শিক্ষার মজলিসে বসে পড়লেন।
(-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২২৯)
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين
Comments
Post a Comment