কিভাবে আমরা ভালোবাসা দিবসের সাথে পরিচিত হলাম ও এই বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি "!



**ভালোবাসা দিবসের সুচনা :-
ভালোবাসা দিবসের শিকড় প্রাচীন রোমান সভ্যতায়।                                                       এটা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন পুরোহিতকে স্মরণে করে পালিত করা হতো, যিনি রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেও বিভিন্ন প্রেমিক-প্রেমিকাকে গোপনে বিয়ে পড়িয়ে দিতেন । 
পরে শাস্তিস্বরূপ তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো,
আর সেই দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। 
পরবর্তীতে খ্রিস্টানদের সমাজে তাকে সম্মান করে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলো এবং দিনটি ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ হিসেবে তারা পালন করতো তাদের ধর্মে।

**আমাদের দেশে কিভাবে আসলো এই  ভালোবাসা দিবসের ফিতনা!

মূলত বাংলাদেশে এই ভালোবাসা দিবস নামে এই নতুন ফিতনার আবির্ভাব ঘটেছিল১৯৯৩সাল থেকে।
 সাংবাদিক ও যায় যায় দিন নামক এক পত্রিকার সম্পাদক যার নাম ছিলো শফিক রেহমান,
শফিকুর রেহমান নামক এই লোকের হাত ধরেই  প্রথম আগমন ঘঠে, কারণ সে সময় তিনি লন্ডনে পড়াশুনার সুবাদে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সাথে ছিলো তার পরিচিত, সে হিসেবে তিনি যায় যায় দিন নামক পত্রিকার মাধ্যমে এই ভালোবাসা দিবস খুব সহজে বাংলাদেশি মানুষদের কাছে তুলে ধরেছিলেন।
জানা যায়, তার তেজগাঁওয়ের পত্রিকা অফিসে কেউ চাকুরীর জন্য গেলে  সাথে করে কোনো  মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে যেতে হতো।               ভালোবাসা দিবস প্রথম ব্যবহার করেন শফিক রেহমান। 

এই দিনে বেশির ভাগ মানুষ দেখা যাই বিভিন্ন সম্পর্কের মানুষকে ফুল গিফট করে,প্রেমিক প্রেমিকাকে, ও বন্ধুবী বান্ধবীকে, এক বন্ধু অপর বন্ধুকে,  স্ত্রীকে স্বামীকে এবং স্বামী স্ত্রীকে , মা-বাবাকে এবং মা বাবা ও সন্তানকে ,ছাত্র এবং শিক্ষক ফুল, চকলেট, কার্ড ইত্যাদি জিনিষ পত্র আদান প্রদানের করে,
এই আদান-প্রদানের মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশ করে থাকে কিছু মানুষ, এই দিনে বিভিন্ন পার্ক এবং যত বিনোদন আর ঘুরার জায়গা আছে সবকিছুতেই থাকে মানুষের দ্বারা ভরপুর।

••এই "ভালোবাসা দিবস" পালন করাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পেশার মানুষেরা সুবিধা নেয়, ফুলের দোকানদার ফুলের দাম বাড়িয়ে দেয়, ফ্যাশন হাউজ, উপহার অর্থাৎ গিফটের দোকানে ও সব কিছুর দাম বেড়ে যাই,বেকারি ও ফ্রুট এর দোকানগুলোতে বিশেষ কিছু অফার চালু রাখে এই দিনটিকে কেন্দ্র করে,তাছাড়া টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলগুলোতে "ভালোবাসা দিবসের গান শুনানো হয় মানুষকে "ভালোবাসা দিবসের নাটক" ইত্যাদিও প্রচারিত হয়। 

**প্রথমে বলে রাখি ইসলামে মানুষকে কষ্ট দেওয়া জায়েজ নাই, তাই আর মানুষের জন্য ক্ষতি আছে এমন ও কোন কিছু নেই।
 পৃথিবীতে মানুষের চরিত্রের উপর আর কোন কিছু নেই, যার চরিত্র সুন্দর তার সবকিছু সুন্দর, মানুষের আচার ব্যবহার থেকেই সৃষ্টি হয় ভালোবাসা, এই ভালোবাসার জন্য কোন দিবস লাগেনা, যেমন ভালোবাসা সম্প্রীতি ও উত্তম চরিত্রের মাধুর্যের কারণে আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ভালোবাসা অর্জন করে নিয়েছেন শত কোটি মানুষের হৃদয়ে।
 পুরা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন তার ভালোবাসা  প্রেম-ভালোবাসা ও মায়া-মমতা, ভক্তি-শ্রদ্ধা, সব সময় প্রয়োজন। এসব মানবিক গুণ আছে বলেই এখনো শান্তিটো আছে পৃথিবী, যেসব এলাকায় শৃঙ্খলা নাই, এসব এলাকায় মানুষের শৃঙ্খলা ও তেমন থাকে না,
মহান রাব্বুল আলামিন  নিজেই ঘোষণা করেছেন, ‘তার মাঝে এক উদাহরণ হল, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা: আর রুম, আয়াত: ২১)।

 আমাদের প্রতিটি ভালোবাসা হতে হবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে, কোন আবেগে নয়, বিবেক এবংএকমাত্র স্রষ্টার খুশির জন্যই হতে হবে, 
কিন্তু যে ভালোবাসা হয় শুধু আবেগ আর মানুষকে খুশি করার লক্ষে- থাকে না সেই ভালোবাসায় কোনো পবিত্রতা,বা বাস্তবতা,থাকে শুধু কুপ্রবৃতি আর নোংরামি, সে ভালোবাসা নষ্ট করে দেয় একজন মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত।                  নষ্ট করে দেয় মানুষের ভিতরে লুকিয়ে থাকা মনুষ্যত্ব, মানুষের ভিতর জাগ্রত করে দেয় পশুত্বের বৈশিষ্ট্য মানুষ হারিয়ে ফেলে নিজের বৈশিষ্ট্য। 
       
আর এখন তো ভালোবাসা দিবস ছাড়া ও 
মানুষের ভালোবাসার শেষ নাই, প্রতিটা নেকক যবুক জানে সেকিভাবে নিজের মনকে পবিত্র রাখার চেষ্টা করে, কিন্তু তা ও কতটা পারছে!! এর মধ্যে যদি এমন একটা উৎসাব পালন করে তাহলে কিভাবে তরুণ সমাজ ভালোর দিকে আগাবে??
আর এই সব দিন গুলোতে থাকেনা কারো মাঝে ভেদাভেদ রাস্তায় সকলে বের হয় পর্দা তো ১০০%করেইনা তারমাঝে যবুক-যুবতীর অবৈধ মেলামেশা, নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা,  খুব সহজে করার যাই।
যা ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না।

 ••ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক বালেগ নারী-পুরুষের ওপর পর্দার বিধান রক্ষা করা ফরজ।

পর্দা নারী-পুরষ উভয়ের জন্যই ফরজ।          পর্দার বিধান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র •কোরআনে বলেন, 'হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের একাংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না।

ইসলামে বিয়ের আগে একজন নারীও একজন পুরুষের কোনো সম্পর্ককেই বৈধতা দেয়না, যতো ভালো সম্পর্কই হোক না কেনো,
অকারণে দেখা সাক্ষাৎ,এমনি এমনি চিঠিপত্র আদান-প্রদান করা, একজন আরেক কথাবার্তা বলা ও সব কিছুই নাজায়েজ ও মারাত্মক গুনাহ।

 ••এ বিষয়ে অসংখ্য কোরআনের আয়াত ও হাদিস রয়েছে:-
ভালোবাসা একটি আপেক্ষিক বিষয়, যা নিজে মন চাইলেই করা যাই আবার মন চাইলেই ছাড়া যাই এমন না,এটি মূলত বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষিত হওয়ার ফল।                                  মানুষ ভালোবাসার বেপারে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না,  তাই রাসূল (সা.)-নিজের স্ত্রীদের পালা বণ্টন করে বলেছেন,আর বলতেন ‘হে আল্লাহ, আমার যতটুকু সাধ্য ছিল আমি ইনসাফ করার চেষ্টা করেছি, আর যে বিষয়টি আমার সাধ্যে নেই (অর্থাৎ কোনো স্ত্রীর প্রতি বেশি ভালোবাসা), সে বিষয়ে আমাকে ভর্ৎসনা করবেন না।’
 (সুনানে তিরমিজি : ৩/১৮৫, হাদিস নম্বর ১১৪০, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ৪/৪১৪)।

ভালোবাসা হলো মানের একধরণের টান। যাতে কোনোই ক্ষাদ থাকবে না। ভালোবাসা হয় নিঃস্বার্থ, যাতে থাকেনা কোনো স্বার্থপরতার আভাস, ইসলামে ভালোবাসার গুরুত্ব অপরিসীম। ভালোবাসা মুমিনের প্রতীক, একে অপরের প্রতি ভালোবাসা থাকাএকজন মুমিন মুসলমানের জন্য অপরিহার্য।
 রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:-- ‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা মুমিন হবে,আর তোমরা মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরে একে অপরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের কথা বলবো না, যা করলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? সাহাবীগণ বললেন, নিশ্চয়, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (তিনি বললেন) তোমাদের মাঝে প্রচুর পরিমাণে সালামের প্রচলন করো।’ 
(মুসলিম, হাদিস নং- ২০৩) 
তিনি আরো বলেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পায়।
 ১. আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল তার নিকট অন্য সবকিছু থেকে অধিক প্রিয় হওয়া। 
২. একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই কাউকে ভালোবাসা।
 ৩. কুফুরিতে প্রত্যাবর্তন করাকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ন্যায় অপছন্দ করা।’
 (বুখারি, হাদিস নং-১৬)

তাই ভালোবাসা আল্লাহর দান। যার প্রতিই ভালোবাসা হোক না কেন, তা অবশ্যই শরীয়ত  সমর্থিত হতে হবে। আর ভালোবাসার উদ্দেশ্য হতে হবেএকমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, ও আল্লাহকে খুশি করা,       
একজন ওপর জনকে ভালোবাসা একমাত্র আল্লাহর জন্য,প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা নবীও নয় শহীদও নয়। কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তাদের সম্মানজনক অবস্থান দেখে নবী এবং শহীদগণও ঈর্ষা করবে। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদেরকে বলুন, তারা কারা? তিনি বলেন, তারা ওই সব লোক, যারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে ভালোবাসে। অথচ তাদের মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্কও নেই এবং কোনো অর্থনৈতিক লেনদেনও নেই। 
আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় তাদের চেহারা হবে নুরানি এবং তারা নুরের মধ্যে থাকবে। সেদিন তাদের কোনো ভয় থাকবে না, যেদিন মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত থাকবে এবং সেদিন তাদের কোনো চিন্তা থাকবে না, যেদিন মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকবে।’ 
(আবু দাউদ, হাদিস নং -৩৫২৯)

তাই ভালোবাসা সম্পূর্ণই আল্লাহপ্রদত্ত গুন আর  তাই প্রকৃত ভালোবাসা হওয়া চাই আল্লাহর জন্যই। আপনি কোনো মানুষকে হয়তো অনেক ভালোবাসেন কিন্তু সে আপনাকে আপনার মতো ভালো না ও ভালোবাসতে পারে, যে কোনো সময় ধোঁকার সম্ভাবনা রয়েছে। মানুষের মন বলে কথা মুহূর্তেই রং বদলানোর সম্ভবনা রয়েছে। আর 
আল্লাহর ভালোবাসার গ্যারান্টি রয়েছে। আল্লাহকে ভালোবাসলে; নিশ্চিত আল্লাহও আপনাকে ভালোবাসবেন এবং প্রতিদানও দেবেন। মহাপ্রতিদান। 
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(হে নবী) আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ করো। আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদেরকে তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু।’
 (সুরা আলে ইমরান, আয়াত-৩১)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

"তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার বাবা-মা, সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে প্রিয় হয়ে উঠি।"
(সহিহ বুখারি: ১৫)
 
••অনেক বছর পর মনে হয় এই বছর ১৪ই ফেব্রুয়ারিতেই আমাদের শবে বারাত একই রাতে অনুষ্ঠিত হবে আলহামদুলিল্লাহ, হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসে অধিক পরিমাণ ইবাদাতে কাটাতেন, এবং ইবাদতের মাধ্যমে কাটাতেন, তাই আমাদেরও চেষ্টা করা অশ্লীলতায় না ডুবে এই পবিত্র শবে বরাত কে সুন্দর ভাবে ইবাদত এর মাধ্যমে কাটানো!




Comments