আলহামদুলিল্লাহ এখন শবে বরাতের রাত, এই রাতে আমাদের প্রয়োজনিয় আমল সমূহ।



আলহামদুলিল্লাহ এখন পবিত্র শবে বরাতের রাত।আল্লাহ তাঁয়ালা এই রাতকে তার  সম্মন ও মর্যাদায়  বজায় রেখে আমাদের সকলকে পলন করার তাওফিক দান করুন।

শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়, ভাবতেই অভাব লাগে এই মাসের তারিখ গুলোর দিকে খেয়াল করলে, কারণ আমরা যেহেতু মুসলিম পরিবারের সন্তান আমাদের আরবি মাসের তারিখ গুলো খেয়াল রাখতের হয়, তবে সকলে অবশ্যই আরবি তারিখগুলো মনে রাখতে পারিনা,কিন্তু ইংলিশ গুলো সকলের মনে থাকে, সে হিসেবে এই এই মাসে তারিখ সবাই জানে, ইংলিশ মাস এবং আরবি মাস একি তারিখ। কি সুন্দর একটা বিষয় মনে লাগার মতো!

তবে আরো ভালো লাগার বিষয় হলো আজকে একটা ভালো বিশেষ রাত, সেটার নাম হলো শবে বরাত।

শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে,

••‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। 

•শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত,

•শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’।

 হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ বলা হয়েছে। 

ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানা ভাষায় যা ‘শবে বরাত’ নামেই অধিক পরিচিত

এই রাতে আল্লাহতাঁয়ালা তার বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন, এই রাতে মুসলিম পরিবারের সকলেই  মোটামুটি চেষ্টা করে যাতে সারারাত আমলে মধ্যেই কাটাতে পারে, এবং মহিলারা যারা নামাজ না পড়তে পারে তারা ও তাসবীহ ও বিভিন্ন দোয়ার মাধ্যমে কাটায়, কারণ এইরাতকে রাসূল(সা.)গুরুত্ব দিয়েছেন।

••হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া–বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।

 (তিরমিজি: ৭৩৯)।

অর্থাৎ এরদ্বারা বুঝা যাই এইতে বিশেষভাবে গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য আল্লাহকে বেশি বেশি বলা এবং নফল  নামাজ ও দোয়া মাধ্যমে রাতটাকে কাটানো। এবং মৃত ব্যক্তিদের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা।


••রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। 

(ইবনে মাজাহ)। 

••নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাত ইবাদত–বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, ‘কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিক প্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব।’ এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)।


** এই রাত আমরা  আনন্দ করে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য আসেনি, এদিকে এদিকে ঘোরাফেরা করা আর এর বাসায় ওর বাসায় যাওয়া এবং মোবাইল দেখে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য আসেনি, এই রাত এসেছে আমল ও নিজের পাপ ক্ষমা করে নেয়ার জন্য।

•••"এই রাত(শবে বরাত) যেভাবে আমাদের কাছে আসলো ""

কারণ ইবাদতের মধ্যে কিছু মানুষ অতিরিক্ত করে আবার কিছু মানুষ অতিরিক্ত ছেড়ে দেয়,

 অনেকের বিভিন্ন প্রশ্ন থাকে এ বিষয়ে অনেকে বলে যে কোরআনে এটার বিষয়ে নেই বা হাদীসে নেই। তাদেরকে উত্তর হিসেবে :-

  ••উম্মুল মু’মিনিন হযরত আয়েশা রা. বলেছেন, একদিন গভীর রাত্রে রসুলুল্লাহ সা. নামাজ পড়ছিলেন। নামাজ পড়ার সময় তিনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দীর্ঘ সেজদা করেন। এভাবে দীর্ঘ সেজদা করতে দেখে, হযরত আয়েশা রা. এর ধারণা হয়, রসুলাল্লাহ সা. হয়তো নামাজ পড়তে গিয়ে ইন্তেকাল করেছেন।


হযরত আয়েশা রা. তখন তার সন্দেহ দূর করার জন্যে রসুলুল্লাহ সা. বৃদ্ধাঙ্গুলিটি ধরে নাড়া দেন। তাতে রসুলাল্লাহ সা. আঙুল নাড়িয়ে সাড়া দেন। এরপর রসুলাল্লাহ সা. সেজদা থেকে উঠে নামাজ শেষ করে হযরত আয়েশা রা. কে বললেন, হে আয়েশা! তোমার কি ধারণা, আল্লাহর রসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? হযরত আয়েশা রা. তখন উত্তরে বলেন, না, ইয়া রসুলুল্লাহ,

 আপনার দীর্ঘক্ষণ সেজদা করা দেখে আমি শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, আপনি হয়তো ইন্তেকাল করেছেন? তাই আমি আমার সন্দেহ মেটানোর জন্য আপনার আঙুল নেড়ে, আপনাকে পরীক্ষা করে দেখছিলাম আপনি জীবিত আছেন কি না।

নবীজি তখন আয়েশাকে রা.-কে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি জানো, আজকের রাতটি কী রাত? আয়েশা তখন নবীজিকে বলেন, আল্লাহ ও তার রসুলই আমার অপেক্ষা ভালো জানবেন আজেকের রাতটির তাৎপর্য কী?

তখন রসুলাল্লাহ সা. বললেন, আজকের রাতটি হলো অর্ধ শাবানের রাত। মহান আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে তার বান্দার সব প্রার্থনা মনোযোগ সহকারে শোনেন। যারা ক্ষমাপ্রার্থী তাদের পাপ ক্ষমা করে দেন। আর যারা অনুগ্রহপ্রার্থী তাদের অনুগ্রহ করেন, তাদের বরকত প্রদান করেন। আর যারা বিদ্বেষ পোষণকারী, তাদের ক্ষমা না করে তাদের নিজের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।

••আর শাবান মাসে রাসূল (সা :)তো  এমন ও অধিক পরিমান রোয়া রাখতেন,কারণ রমজান মাসের আগের মাস হলো শাবান মাস,এই মাসে রমজানের প্রস্তুতি, রমজান মাসে ভালো করে ইবাদত করতে পারার জন্য এইটায় সুযোগ।

** বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া, এবং যদি  নিজের কাজা নামাজ থাকে তাহলে সেগুলো ও আদায় করে নেওয়া।

** বেশি বেশি দোয়া করা এবং মৃত ব্যক্তিদের কবর জিয়ারত করা,

** কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা, এবং বেশি বেশি এস্তেগফার পড়া।

** এবং আগামীকাল একটা নফল রোজা রাখা। 

 আল্লাহ ত'য়ালা আমাদেরকে বুঝে এগুলোর আমল করার তৌফিক দান করুক।





Comments