আমাদের ফিলিস্তিনের ভাই-বোনদেরকে আল্লাহ তায়ালা হেফাজত করুন '
২১-৩-২০২৫,
২০ রমজান
এগারোটা মাসের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা একটা মাস দিয়েছেন যে মাসটা শুধু রহমত আর দয়া দিয়ে ভরপুর করা।
আলহামদুলিল্লাহ আমরা এখন সেই রহমতের মাসেই উপনীত আছি, কিন্তু এই রহমতের মাসগুলোতেও যখন দেখি আমাদের কিছু ভাই বোনেরা অশান্তিতে বা কষ্টে আছে, তখন খুব খারাপ লাগে, আর তাঁদের জন্য কিছু করতে না পারাতে আরো বেশি মনে হয় নিজেকে অপরাধী।
আর যখন দেখি তাদের উপর জুলুম হচ্ছে এবং করা হচ্ছে তাদেরকে নিহত করা হচ্ছে,
তখন নিজের ভিতর থেকে একটা শব্দই বের হয়নি এখানে মুসলিম হিসেবে আমাদের ওপর ভাই বোনদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই, কিছ দিন পর পরই তারা হবে শহীদ আর আমরা করবো তাদের জন্য হাইহুতাশ? এছাড়া কি আমাদের আর কোনো কাজই নেই!
মুসলিম তো ঘুমায়ে থাকার জন্য দুনিয়াতে আসেনি, মুসলিম এর কাজ তো হাসি তামাশা আর হাইহুতাশ না, মুসলিম তো সর্বদা অপরাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শক্তি ও ক্ষমতা নিয়ে জন্মানো জাতি।
যে জাতি নতুন বউ ঘরে রেখেও জিহাদ করে শহীদ হওয়ার নজির রেখে গেছে প্রমান স্বরূপ পৃথিবীতে, সে জাতি কিভাবে বসে থাকে অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে। চোখের সামনে শহীদ হচ্ছে ফিলিস্তিনে আমাদের হাজারো ভাই-বোনেরা, তারা কেনো দেখতে পাচ্ছে না তাদের অন্য ভাই-বোনেরা তাদের সাহায্যে হাত বাডচ্ছে!!
* ** ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ নিয়ে হাদিসে যা আছে,
বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। বর্তমানে তারা ফিলিস্তিনের মুসলিমদের সঙ্গে যুদ্ধরত। এরই মধ্যে উভয় পক্ষে নিহতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে।
•• মহানবী (স.) এই ইহুদিদের সঙ্গে মুসলিমদের যুদ্ধ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন:-
এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামত সংগঠিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলমানগণ ইহুদি সম্প্রদায়ের সাথে লড়াই না করবে। মুসলমানগণ তাদেরকে হত্যা করবে। ফলে তারা পাথর বা বৃক্ষের আড়ালে আত্মগোপন করবে। তখন পাথর বা গাছ বলবে- হে মুসলিম, হে আল্লাহর বান্দা! এই তো ইহুদি আমার পশ্চাতে। এসো, তাকে হত্যা কর। কিন্তু ’গারকাদ’ গাছ এ কথা বলবে না। কারণ এ হচ্ছে ইহুদিদের গাছ।
(সহিহ মুসলিম: ৭০৭৫)
যুগে যুগে ইহুদিদের অপকর্ম ও শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে,পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে তারা আল্লাহর নাফরমানির সকল সীমা লঙ্ঘন করেছে। পবিত্র কোরআন ঘোষণা করেছে, ইহুদিরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী জাতি। ‘যখনই তারা যুদ্ধের আগুন জ্বালায়, আল্লাহ তা নিভিয়ে দেন এবং তারা জমিনে ফিতনা ফাসাদ ও গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না।’
(সুরা মায়েদা: ৬৪)
তারা ছিল নাফরমান ও সীমা লঙ্ঘনকারী।’ (সুরা বাকারা: ৬১)
নবীগণ তাদের সতর্ক করলে তারা ওই নবীদের হত্যা করতে থাকে।
(তাফসিরে বয়ানুল কোরআন: ২/৩৬৭-৩৬৮)
হজরত ইয়াহইয়া (আ.) ইহুদিদের অশ্লীল কার্যকলাপের বিরোধিতা করলে তারা তাঁকে দ্বিখণ্ডিত করে কতল করে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, বনি ইসরাইল ৩০০ আল্লাহর নবীকে হত্যা করেছে।
(তাফসিরে ইবনে আবি হাতেম: ১/১২৬
*** তবে রাসুল (স.) এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, কেয়ামতের আগে অবশ্যই এ ইহুদি জাতি মুসলিমদের হাতে পরাস্ত হবে ।
(মুসনাদে আহমদ: ২৬৩৪৩)
মসজিদুল আকসার ভূমি তথা ফিলিস্তিন মুসলমানদের কাছে খুবই মর্যাদাপূর্ণ। অসংখ্য নবী-রাসুলের পূণ্যভূমি ফিলিস্তিন।
কোরআনের ভাষায় এ অঞ্চলের নাম বিলাদ আশ-শাম।
বর্তমানের সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান ও পূর্ণ ফিলিস্তিন ভূখণ্ড প্রাচীন মুলকে শামের অন্তর্ভুক্ত। মুসলমানদের কাছে বায়তুল মুকাদ্দাস মক্কা ও মদিনার পরে সবচেয়ে পবিত্রতম স্থাপনা।
(সহিহ বুখারি: ১১১৫)
এছাড়াও প্রিয়নবী (স.) ওহি লাভ ও নবুয়ত প্রকাশের সময় বায়তুল মুকাদ্দাসই মুসলমানদের কিবলা ছিল।
(সুরা বাকারা: ১৪২-১৫১)
মহানবী (স.) বায়তুল মুকাদ্দাস থেকেই মেরাজে গমন করেছিলেন।
(সুরা বনি ইসরাইল: ১)
কিন্তু বর্তমানে ইহুদিরা এই মসজিদ দখল করে রেখেছে।
১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভের পর বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের হস্তচ্যুত হয়ে যায়। সেই থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস তাদের দখলে রয়েছে। যদিও তারাও এই স্থানকে মর্যাদার চোখে দেখে। তাদের কাছে এটি পবিত্র ভূমিখ্যাত ‘টেম্পল মাউন্ট’ বা ‘ঈশ্বরের ঘর’। কিন্তু তারা বিভিন্ন অজুহাতে বায়তুল মুকাদ্দাসে কড়াকড়ি শুরু করে, বিধি-নিষেধ আরোপ করে, এমনকি মসজিদে গুলি করে রক্তাক্তও করেছে মুসলমানদের।
***হাদিস শরিফ বলছে, এসবের একদিন শেষ হবে। মুসলমানদের একটি দল তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে এবং বিজয়ী হবে।
হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন:- আমার উম্মতের একটি দল সত্যের ওপর বিজয়ী থাকবে। শত্রুর মনে পরাক্রমশালী থাকবে। দুর্ভিক্ষ ছাড়া কোনো বিরোধী পক্ষ তাদের কিছুই করতে পারবে না। আল্লাহর আদেশ তথা কেয়ামত পর্যন্ত তারা এমনই থাকবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, তারা কোথায় থাকবেন? রাসুল (স.) বললেন, ‘তারা বায়তুল মাকদিস এবং তার আশপাশে থাকবে।’
(মুসনাদে আহমদ: ২১২৮৬)।
মুসলিম জানে যে মরণশীল তার মৃত্যু অনিবার্য, যেমন :-
মুসা (আঃ) কর্তৃক আজরাইল (আঃ)
কে থাপ্পর মারার ঘটনা ৷
তার পরেও মৃত্যু থেকে বাঁচার উপায় নাই!
মৃত্যুর ফেরেশতাকে মুসা (আঃ) এর কাছে পাঠানো হলে মুসা (আঃ) তাঁকে চপেটাঘাত করেন যার ফলে তাঁর চোখ বেরিয়ে যায়। তখন মৃত্যুর ফেরেশতা আল্লাহ কাছে ফিরে গিয়ে বলেন আমাকে এমন এক বান্দার কাছে পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। তখন আল্লাহ তাঁর চোখ ফিরিয়ে দিয়ে হুকুম করেন আবার গিয়ে তাঁকে বলো তিনি একটি ষাঁড়ের পিঠে তাঁর হাত রাখবেন তখন তাঁর হাত যতটুকু আবৃত করবে তার সম্পূর্ণ অংশের প্রতিটি পশমের বিনিময়ে তাঁকে এক বছর করে আয়ু দান করা হবে। মুসা (আঃ) এ শুনে বলেন হে আমার রব অতঃপর কী হবে? আল্লাহ বলেন অতঃপর মৃত্যু। মুসা (আঃ) বলেন তা হলে এখনই (মৃত্যু) হোক।
(বুখারী ৩৪০৭ মুসলিম ২৩৭২)
এ দ্বারা বুঝা গেল যে দুনিয়াতে যখন একবার এসেছি আমরা আবারও আল্লাহতালার কাছে ফিরে যেতে হবে, তাহলে আমাদের মুসলমানদের জন্য কিসের এত ভয়, কেন আমরা পারছি না ফিলিস্তিনদের পাশে দাঁড়াতে,যেখানেই মুসলমানদের উপর অত্যাচার হয় সেখানে তাদের পক্ষ নিয়ে প্রতিবাদ করতে, আমাদের এত কিছু টান কিসের আমরা তো জানি যে যুদ্ধ করে মৃত্যু হলে সেটা হবে আমাদের জন্য শহীদি মৃত্যু...
••তরবারি ছেড়ে যেদিন থেকে তসবিহ আর দানায় জান্নাত খোঁজা শুরু,
সেদিন থেকেই মুসলিমদের মার খাওয়া শুরু।
ফিলিস্তিনের শিশুরা খেলছিল মাঠে, হাসি ছিল মুখে,
হঠাৎ বাজলো বুলেটের শব্দ,তাদের দেহের রক্ত ঝরল সুখে।
ফুলের মতো নরম দেহ, মা’র কোলে গোজলো তাদেরকে মুখ,
বোমার আগুনে পুড়ে গেল সব কিছু ধুলোয় গড়িয়ে।
খেলার সেই পুতুলটাই পড়ে রইলো রক্তের বন্যায়,
মায়ের কান্না চাপা পড়ে গেল বিষ্ফোরণের মহিমায়।
আকাশে ধোঁয়ার পর্দা, বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ
ফিলিস্তিনের মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে রক্তের সেই ছাপ।
••হে মুসলিম উম্মাহ, আর কত চুপ থাকবে?
ওদের আর্তচিৎকার কি শুনতে পাচ্ছ না কানে ?
তোমার ভাইয়ের রক্তে ভিজছে জমিন,
তবুও কি তুমি বসে থাকবে নীরব ও মলিন হয়ে ?
রুখে উঠে দাঁড়াও, ঝাঁপিয়ে পড়ো, ধ্বংস কর শত্রুকে,
ফিরিয়ে দাও নিপীড়কের ঘরে আগুনের প্রতিশোধ।
শহীদের রক্তে ভেজা এই ভূমি সাক্ষী দেবে,
জিহাদের ময়দানে কে সত্য, কে মিথ্যা প্রমাণ হবে।
ফিলিস্তিনের শিশুর কান্না আজ তোমায় ডাকছে,
জাগো, হে মুসলিম! তোমার ঈমানকে বাঁচাও।
বুলেটের জবাব দাও বিশ্বাসের তলোয়ারে,
শত্রুর প্রতিটি আঘাত ফিরিয়ে দাও বজ্র হুংকারে।
আল্লাহর নামে, সত্যের শপথ,
অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করো অবিরত।
বিজয় আসবেই, শহীদের রক্ত বৃথা যাবে না,
ফিলিস্তিন হাসবে, ইনশাআল্লাহ, আবার মুক্তি পাবে।
***ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের..
ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণ এবং এই যুদ্ধের ইতিহাস হাদিসে যা বলা আছে,
••কীভাবে ইসরায়েলের জন্ম?
বলা হয়, ইসরায়েলের জন্ম মূলত বেলফোর ঘোষণা থেকে। ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব আর্থার বেলফোর ব্রিটিশ ইহুদি সম্প্রদায়ের সদস্য ও আন্দোলনকারীদের নেতা লিওনেল ওয়াল্টার রথশিল্ডকে সম্বোধন করে একটি চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিটি ছিল মাত্র ৬৭ শব্দের। এই চিঠিতে ‘ইহুদি জনগোষ্ঠীর জন্য ফিলিস্তিনে আবাস প্রতিষ্ঠা’ এবং এর অর্জন সহজতর করার বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়। চিঠিটি ‘বেলফোর ঘোষণা’ নামে পরিচিত।
অর্থাৎ একটি ইউরোপীয় শক্তি ইহুদিবাদী আন্দোলনকে এমন একটি দেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যেখানে ফিলিস্তিনি আরবরা সংখ্যায় ৯০ শতাংশের বেশি ছিল। ১৯২৩ সালে এই ইস্যুতে একটি ব্রিটিশ ম্যান্ডেট তৈরি করা হয়েছিল যা ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। ইউরোপে নাৎসিবাদের কারণে ইহুদিরা পালাচ্ছিল এবং সেই সময়ে ব্রিটিশরা ব্যাপকহারে ফিলিস্তিনে ইহুদি অভিবাসনকে সহায়তা করেছিল।
এদিকে ফিলিস্তিনিরা তাদের দেশে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। ১৯৩৬ সালে তারা আরব ন্যাশনাল কমিটি গঠন করে। তারা ক্রমবর্ধমান ইহুদি বসতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অবরোধ ঘোষণা করে এবং ইহুদিদের উৎপাদিত পণ্য বর্জনের ডাক দেয়।
তবে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা সব উপায়ে ইহুদি বসতি স্থাপনাকারীদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। ইহুদিদের প্যারামিলিটারি বাহিনী গঠনেও সহায়তা করে ব্রিটেন। ১৯৩৭ থেকে ১৯৩৯ সাল নাগাদ তিন বছরে আরবদের সঙ্গে ইহুদি সশস্ত্র যোদ্ধাদের লড়াইয়ে অন্তত পাঁচ হাজার ফিলিস্তিনি মারা যায়। ১৫ থেকে ২০ হাজার ফিলিস্তিনি আহত ও সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ বন্দি হয়।
১৯৪৭ সাল নাগাদ ইহুদিরা ফিলিস্তিনের ছয় শতাংশ দখল করে নেয়। তাদের মোট জনসংখ্যা দাঁড়ায় ফিলিস্তিনের ৩৩ শতাংশে। তখনও ৬৭ শতাংশ আরব জনগোষ্ঠী ছিল দেশটির ৯৪ শতাংশ জমির মালিক।
*** সংঘাতের শুরু কোথায়?
এই সংঘাতের একদিকে রয়েছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা, আরেকদিকে রয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তার দাবি। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড বেন গুরিয়ন ইহুদিদের জন্য এই অঞ্চলে একটি ’নিরাপদ আবাসভূমি’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নের মুখে পালিয়ে বেড়াতে থাকা ইহুদিরা নিরাপত্তা পাওয়ার আশায়ই ইসরায়েলে এসে আশ্রয় নেন।
••ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা আসার পর দিন থেকে ব্রিটিশ শাসনাধীন ফিলিস্তিনে যে যুদ্ধ শুরু হয়, তাতে সাড়ে সাত লাখের মতো আরব নিজেদের আবাস ছেড়ে পার্শ্ববর্তী জর্ডান, লেবানন, সিরিয়ায় আশ্রয় নেন। অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে বসবাস শুরু করেন। নিহত হয় অন্তত ১৫ হাজার ফিলিস্তিনি।
ইহুদিরা দেশটির ৭৮ শতাংশ দখল করে নেয়। বাকি ২২ শতাংশ ছিল এর ভেতরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন এলাকা।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘণিষ্ট মিত্র ইসরায়েল ওই সময় দাবি করেছিল, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়ার পরদিনই পাঁচটি আরব দেশ তাদের আক্রমণ করেছে এবং এই হামলার কারণেই এতো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
১৯৪৯ সালে অস্ত্রবিরতির কারণে যুদ্ধ সাময়িক স্থবির হলেও এই সংঘাত মূলত পুরোপুরি আর থামেনি কখনও।
•• {ফিলিস্তিনিরা ১৯৪৮ সালের ১৫ মে যুদ্ধ শুরুর দিনটিকে প্রতি বছর ‘নাকাবা’ দিবস বা বিপর্যয়ের দিন হিসেবে পালন করে}।
ইসায়েলের বসতির ফাঁকে ফোঁকরে এখনও যেসব আরব-ফিলিস্তিনি বসবাস করছে, তাদেরই বিভিন্ন আন্দোলনরত গোষ্ঠী লড়াই করে চলেছে। ইসরায়েলের জনসংখ্যার তুলতায় ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা এখন প্রায় ২০ শতাংশের মতো।
**প্রধান যুদ্ধ কোনগুলো?
১৯৪৯ সালের পর ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল প্রথমবারের মতো ও পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মিশর ও সিরিয়ায় হামলা করে। এটা ‘ছয় দিনের যুদ্ধ’ বা আরবিতে ‘নাকসা’ হিসেবে পরিচিত।
এই যুদ্ধেই পশ্চিম তীর, জর্ডান নিয়ন্ত্রিত পূর্ব জেরুজালেম ও সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরায়েল।
১৯৭৩ সালে মিশর ও সিরিয়া সুয়েজ খাল ও গোলান মালভূমি বরাবর ইসরায়েলি স্থাপনাগুলোয় হামলা চালায়। শুরু হয় ‘ইয়োম কিপপুর যুদ্ধ’। তবে তিন সপ্তাহের মধ্যেই উভয় দেশের বাহিনীকে হটিয়ে দেয় ইসরায়েল।
১৯৮২ সালে ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননে আক্রমণ চালায়। ১০ সপ্তাহের সংঘাতে ইয়াসির আরাফাতের (ফিলিস্তিনের সাবেক নেতা) নিয়ন্ত্রণাধীন হাজারো যোদ্ধাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। ২০০৬ সালে লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী দুই ইসরায়েলি সেনাকে আটক করলে দুই দেশের মধ্যে আবারও সংঘাত সৃষ্টি হয়।
১৯৬৭ সালে মিশরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া গাজা উপত্যকা ২০০৫ সালে ছেড়ে দেয় ইসরায়েল। কিন্তু গাজার নিয়ন্ত্রণকারী হামাস গোষ্ঠী মাঝে মধ্যেই রকেট হামলা চালালে ইসরায়েল বিমান থেকে হামলা করে। এরকম বিরোধের জের ধরেই ২০০৬, ২০০৮, ২০১২, ২০১৪ ও ২০২১ ও বর্তমানে ২০২৫ সালে এসেছ ও তারা বড় ধরনের ইসরায়েলি আক্রমণ-আগ্রাসনের ঘটনা আবারো ঘটাচ্ছে।
এসব যুদ্ধের বাইরেও ১৯৮৭ সালে থেকে ১৯৯৩ সাল এবং ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের ডাকা দুটি ‘ইন্তিফাদা’ বা ’ইসলামি জাগরণ’-এর সময় ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে হামাসের আত্মঘাতী বোমা হামলার ঢেউ তৈরি হয়েছে এবং বড় ধরনের সংঘাত দেখা গেছে। ইন্তিফাদা বলতে সংহতি সমাবেশ, গণবিক্ষোভ, আইন অমান্য, ধর্মঘট এসবকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাবে, প্রথম ইন্তিফাদার সময় এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিকে হত্যা এবং প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়।
আর ২০২৫এ তো সকলের চোখে দেখা ছোট ছোট শিশুরা কিভাবে লাশ হয়ে পড়ে আছে,, হাজারো নিষ্পাপ লাশ এক সাথে দাফন করে সমাপ্তি করা হচ্ছে।
***শান্তি প্রতিষ্ঠায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?
১৯৭৯ সালে মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি সই হয়, যা দেশদুটির মধ্যে তিন দশকের বৈরিতা অবসানে ভূমিকা রাখে।
১৯৯৩ সালে ফিলিস্তিনের সীমিত সায়ত্বশাসনের বিষয়ে অসলো চুক্তিতে সম্মত হন ফিলিস্তিনের নেতা ইয়াসির আরাফাত ও ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন।
১৯৯৪ সালে ইসররায়েল ও জর্ডানের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
২০০০ সালে ক্যাম্প ডেভিড সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক ও ফিলিস্তিনের ইয়াসির আরাফাত আলোচনায় বসলেও শান্তি চুক্তির প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়।
২০০২ সালে আরব দেশগুলোর পক্ষ থেকে ইসরায়েলকে সব সেনা প্রত্যাহার করে ১৯৬৭ সালের আগের মানচিত্রে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, যার বিনিময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে বাকি সব আরব রাষ্ট্রের স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করা হবে বলে আশ্বাস ছিল। ইসরায়েল এতে সম্মত না হওয়ায় নিজ দেশে উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ভাগ্য বদলায়নি।
২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সফল হয়নি।
পরবর্তীতে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার যুক্তরাষ্ট্রের চিরাচরিত দুই দেশ নীতিকে প্রত্যাখ্যানের অবস্থানে অটল থাকায় ফিলিস্তিনিরা আর কোনো আলোচনায় অংশ নিতে আগ্রহী হয়নি।
প্রবল হামলার মুখেও গাজা থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ছোড়া বন্ধ হচ্ছে না (ছবি: আল জাজিরা)
শান্তি প্রক্রিয়ার অবস্থা কী এখন?
যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টায় আছে। তবে ফিলিস্তিন অঞ্চলে নতুন সৃষ্ট সংঘাতের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেছে বা সম্পর্কোন্নয়নের প্রক্রিয়ায় আছে তারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো।
*** ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে মূল বিরোধ কী নিয়ে?
দুই রাষ্ট্র সমাধান, ইসরায়েলি বসতি, জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ, উদ্বাস্তু সমস্যা— এগুলোই মূলত যুগের পর যুগ ধরে চলমান বিরোধের মূল ইস্যু।
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান— এটা বলতে বোঝানো হয় ইসরায়েলের পাশাপাশি পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা নিয়ে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠন। তবে হামাস এই দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তারা ইসরায়েলকে ধ্বংস করা শপথে অটল আছে। আর ইসরায়েল বলেছে, একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে অবশ্যই নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে যাতে ইসরায়েলের জন্য তারা কোনও ধরনের হুমকি হয়ে দেখা না দেয়।
বসতি— পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের দখলকৃত ভূমিতে নির্মিত ইহুদি বসতিগুলোকে অবৈধ বলে মনে করে। তবে ইসরায়েলের দাবি, এই ভূমিতে তাদের অধিকার ঐতিহাসিক এবং বাইবেলেও এর সম্পর্কে উল্লেখ করে। তাদের অব্যাহত সম্প্রসারণ ফিলিস্তিনের সঙ্গেই শুধু নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর একটি।
জেরুজালেম— আল আকসা মসজিদসহ মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো নিয়ে পূর্ব জেরুজালেমের দখল নিতে চায় ফিলিস্তিন। তারা এখানে নিজেদের রাষ্ট্রের রাজধানী স্থাপন করতে চায়। তবে ইসরায়েলের কথা হলো, জেরুজালেম তাদের ‘অবিভাজ্য ও চিরন্তন’ রাজধানী হিসেবে থাকবে। পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পায়নি। তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিতর্কিত এই শহরে ইসরায়েলের এখতিয়ারের পরিমাণ নির্দিষ্ট না করেই তাদের দাবিতে সমর্থন দেন এবং ২০১৮ সালে সেখানে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করেন।
শরণার্থী— বর্তমানে প্রায় ৫৬ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী বা উদ্বাস্তু হিসেবে জীবনযাপন করছে। ১৯৪৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময় বাস্তুহারা হয়ে তারা গাজা, পশ্চিম তীর, জর্ডান, লেবানন, সিরিয়ায় বসবাস করছে। নিবন্ধিত শরণার্থীদের প্রায় অর্ধেক বসবাস করছে ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবিরগুলোতে। ফিলিস্তিনি নেতারা বহু বছর ধরে দাবি করে আসছেন, এই শরণার্থীদের নিজের মাটিতে ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া হোক। তবে ইসরায়েলের উত্তর হলো, ফিলিস্তিনিদের যে কোনও স্থাপনা করতে হবে তাদের সীমানার বাইরে।
*** ফিলিস্তিনে কেন অন্তর্দ্বন্দ্ব?
বিশ্ব সম্প্রদায় ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদার সময় প্রতিষ্ঠিত হামাসকে অনেকেই ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠি’ হিসেবে গণ্য করে। ২০০৭ সালে ইসরায়েলকে হঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে গাজা উপত্যকায় ক্ষমতায় আসে তারা। তবে তাদের সঙ্গে পশ্চিম তীর তথা ফিলিস্তিনের মূল রাজনৈতিক দল ফাতাহ’র সুসম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।
পিএলও তথা ফাতাহ নেতা ইয়াসির আরাফাত ২০০৪ সালে মারা যান এবং এর এক বছর পরে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শেষ হয়। এক বছর পর ফিলিস্তিনিরা প্রথমবারের মতো সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেয়। নির্বাচনে হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে ফাতাহ-হামাস গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। কয়েক মাস ধরে চলা সংঘাতে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়।
পরে হামাস গাজা উপত্যকা থেকে ফাতাহকে বহিষ্কার করে। ফাতাহ পশ্চিম তীরের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে।
(তথ্যসূত্র: রয়টার্স ও আল জাজিরা।)
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সম্রাজ্যের পরাজয়ের পর, ব্রিটেন ফিলিস্তিনের নিয়ন্ত্রণ নেয়, যা তখন ইহুদি সংখ্যালঘু এবং আরব সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা ছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্রিটেনকে ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি আবাসভূমি তৈরি করার দায়িত্ব দেয়, যা মুসলমানদের গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তোলে।
১৯২০ থেকে ১৯৪০ দশকের মধ্যে ইউরোপ থেকে দলে দলে ইহুদীরা ফিলিস্তিনে যেতে শুরু করে এবং তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ইউরোপে ইহুদী নিপীড়ন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের ভয়ংকর ইহুদী নিধনযজ্ঞের পর সেখান থেকে পালিয়ে এরা নতুন এক মাতৃভূমি তৈরির স্বপ্ন দেখছিল। ফিলিস্তিনে তখন ইহুদী আর আরবদের মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক সহিংসতা। একই সঙ্গে সহিংসতা বাড়ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধেও।
১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে এক ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনকে দুই টুকরো করে পৃথক ইহুদী এবং আরব রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয় যেখানে জেরুজালেম থাকবে একটি আন্তর্জাতিক নগরী হিসেবে। ইহুদী নেতারা এই প্রস্তাব মেনে নেন, কিন্তু আরব নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
ব্রিটিশরা এই সমস্যার কোন সমাধান করতে ব্যর্থ হয়ে ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ছাড়ে এবং ইহুদী নেতারা এরপর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। বহু ফিলিস্তিনি এর প্রতিবাদ জানালে শুরু হয় যুদ্ধ। হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে তাদের ঘরবাড়ি ফেলে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। ফিলিস্তিনিরা এই ঘটনাকে ‘আল নাকবা’ বা ‘মহা-বিপর্যয়’ বলে থাকে।
পরের বছর যুদ্ধবিরতির মধ্যদিয়ে যুদ্ধ শেষ হয়। ততদিনে ফিলিস্তিনের বেশিরভাগ অঞ্চল ইসরায়েলের দখলে। ১৯৬৭ সালে আরেকটি আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের পূর্ব জেরুজালেমসহ বেশ কিছু অঞ্চল দখল করে নেয়। ইসরায়েল এখন পুরো জেরুজালেম নগরীকেই তাদের রাজধানী ঘোষণা করে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে চায়। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ হাতে গোনা কয়েকটি দেশ।
গত ৫০ বছর ধরেই ইসরায়েল এসব দখলীকৃত জায়গায় ইহুদী বসতি স্থাপন করছে। ছয় লাখের বেশি ইহুদী এখন এসব এলাকায় থাকে। ফিলিস্তিনিরা বলছে, আন্তর্জাতিক আইনে এগুলো অবৈধ বসতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায়। তবে ইসরায়েল তা মনে করে না।
*** হামাস কারা?
ফিলিস্তিনের কট্টর ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সংগঠন হামাস।
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে ইসরায়েলি দখলদারির অবসানের দাবিতে ‘ইন্তিফাদা’ বা ফিলিস্তিনি গণজাগরণ শুরুর পর ১৯৮৭ সালে হামাস গঠিত হয়। সংগঠনটির সনদ অনুযায়ী তারা ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাদের লক্ষ্য, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে বর্তমান ইসরায়েল, গাজা ও পশ্চিম তীর নিয়ে গঠিত একক ইসলামি রাষ্ট্র।
*** আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাস ঘাটলেও দেখা যায়, ইউরোপ থেকে ইহুদিদের বিতাড়িত করা হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদি নিধনযজ্ঞের পর তারা ১৯২০ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে ইউরোপ থেকে পালিয়ে ফিলিস্তিনে ঠাঁই নেয়। সেখানে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিনিয়তই মুসলমানদের জমি দখল করে এবং অবৈধভাবে গড়ে তুলে স্থাপনা। এভাবে ভূখণ্ড দখলের মধ্যদিয়ে তারা রাষ্ট্র গঠন করে। নিজেদের আগ্রাসন টিকিয়ে রাখতে দীর্ঘ ৭৬ বছর ধরে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের নির্যাতন করে চলেছে অদ্যাবধি।
**আমাদের সন্তানকে বারবার ফিলি স্তিনের ইতিহাস শুনাবো, তাকে বারবার বলব কেন আমরা ফিলি স্তিনকে ভালোবাসি—
১. ফিলি স্তিন নবীদের পূণ্যভূমি।
২. ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সর্বপ্রথম ফিলি স্তিনে হিজরত করেন এবং পরবর্তীতে স্ত্রী সারার সাথে সেখানে বসবাস করেন।
৩. লুত আলাইহিস সালামের কওমের ওপর পতিত গজব থেকে আল্লাহ তাআলা লুত আলাইহিস সালামকে রক্ষা করেন ফিলি স্তিনে।
৪. নবী ইসহাক আলাইহিস সালাম ও ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ও ইউসুফ আলাইহিস সালামের জন্ম এই ফিলি স্তিনে।
৫. নবী মুসা আলাইহিস সালাম মিসর থেকে বনী ইসরাইলকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন পবিত্র এই ভূমিতে প্রবেশ করার জন্য। যদিও ইহু দিরা তাদের চিরকালীন কাপুরুষোচিত স্বভাবের কারণে প্রবেশ করতে পারেনি। মুসা আলাইহিস সালাম এই ভূমিকে পবিত্র বলেন।
৬. নবী দাউদ আলাইহিস সালাম অত্যাচারী জালূতের কপালে পাথর ছুঁড়ে তখনকার মুমিনদেরকে ফিলি স্তিন পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করেন।
৭. নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম ফিলি স্তিনে বসেই জিন ইনসানসহ পৃথিবীবাসির ওপর রাজত্ব করেন।
৮. সুলাইমান আলাইহিস সালাম ও পিঁপড়ের যে বিখ্যাত কাহিনী কুরআনে বর্ণিত আছে তা এই শহরেই ঘটেছিল। বর্তমান city of ashkelon এ অবস্থিত আন্ট ভ্যালি আছে واد النمل নামে।
৭. নবী জাকারিয়া আলাইহিস সালাম ফিলি স্তিনেই বাস করতেন এবং তার মিহরাব এই ফিলি স্তিনেই ছিল।
৮. এই বায়তুল মাকদিসেই মারইয়াম আলাইহাস সালাম বসবাস করতেন এবং অলৌকিক খাদ্যভাণ্ডার প্রাপ্ত হতেন।
৯. এই ফিলি স্তিনেই মারইয়াম আলাইহিস সালাম কোনো পুরুষ ব্যতীত একটি শিশু গর্ভে ধারণ করার মতো আশ্চর্যজনক ঘটনার জন্ম দেন।
১০. নবী ঈসা ও ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামের এই ফিলি স্তিনে জন্মগ্রহণ করেন এবং বেড়ে উঠেন।
১১. এই ফিলি স্তিনেই ঈসা আলাইহিস সালামকে হ ত্যার ষড়যন্ত্র হলে আল্লাহ তাআলা ঈসা আলাইহিস সালামকে আকাশে উঠিয়ে নেন।
১২. আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজের রাতে আকাশের জগতে রওয়ানা হওয়ার আগে আল্লাহ তাআলা তাকে ফিলি স্তিনের বায়তুল মাকদিসে মেহমান করেন।
১৩. বায়তুল মাকদিসের দক্ষিণদিকে কোথাও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য জগতের বাহন তাঁর বোরাককে বেঁধে রাখেন।
১৪. ফিলি স্তিনের বায়তুল মাকদিসেই আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল নবী রাসূলগণের নামাজের ইমামতি করেন।
১৫. মিরাজের রাতে নামাজ ফরজ হওয়ার পর মসজিদুল আকসাই ছিল মুসলমানদের প্রথম কিবলা। মুসলমানরা বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ করে নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে আল্লাহর আদেশে কিবলা পরিবর্তন করে আল্লাহর সবশ্রেষ্ঠ ঘর কাবার দিকে ফেরানো হয়।
১৬.
১৭. ঈসা আলাইহিস সালাম দাজ্জালকে ফিলি স্তিন শহরেই শহরের বাবে লুদের কাছে হ ত্যা করবেন।
১৮. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বায়তুল মাকদিস হলো হাশরের ময়দান। পুনরুত্থানের জায়গা। তোমরা তাতে গিয়ে সালাত আদায় করো। কেননা, তাতে এক ওয়াক্ত সালাত আদায় করা অন্যান্য মসজিদে এক হাজার সালাত আদায়ের সওয়ার পাওয়া যায়।’
১৯. দুনিয়াতে নির্মিত দ্বিতীয় মসজিদ পবিত্র শহর ফিলিস্তিনে অবস্থিত। মসজিদটি হলো মসজিদুল আকসা। বলা হয়ে থাকে আদম আলাইহিস সালামই মসজদটি নির্মাণ করেছেন। আবু জর গিফারি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একদিন নবীজিকে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! দুনিয়াতে প্রথম কোন মসজিদটি নির্মিত হয়েছে? তিনি বলেন, মসজিদুল হারাম। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, তারপর কোনটি? প্রতিউত্তরে তিনি বললেন, তারপর হলো মসজিদুল আকসা। এরপর তিনি জানতে চাইলেন যে, উভয়ের মধ্যে ব্যবধান কত বছরের? তিনি বললেন চল্লিশ বছরের ব্যবধান। [সহিহ বুখারি]
২০. বুখারী শরিফে আছে পৃথিবীতে মাত্র তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য সকল মসজিদে ইবাদতের উদ্দেশ্য ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ। এক.মসজিদুল হারাম। দুই. মসজিদে নববী তিন.মসজিদুল আকসা।
২১. সুরা বনি ইসরাইলে আল্লাহ তাআলা মসজিদুল আকসার পরিবেশকে বরকতময় বলেছেন।
২২. সুরা আম্বিয়ায় আল্লাহ তায়ালা এই ভূখন্ডের ব্যাপারে বলেন, ‘আর আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সেই ভূখণ্ডে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্য।’
২৩. সুরা আরাফে আল্লাহ তাআলা ফিলি স্তিনকে কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্য বলেছেন।
২৪. সূরা আম্বিয়ার আরেকটি আয়াতেও সুলাইমানের আলাইহিস সালামের ঘটনায় আল্লাহ তাআলা ফিলি স্তিনে কল্যাণ রেখেছেন বলে ঘোষণা দেন।
২৫. ফিলি স্তিনের এই ইতিহাস হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হেডলাইন। ফিলি স্তিনের আছে আরও অসংখ্য বিস্তারিত ইতিহাস, সাহাবাদের আমলের, তাবেয়ীদের আমলের, সালাফদের আমলের ইতিহাস, সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর ইতিহাস। এই ভূমির কল্যাণের ব্যাপারে আছে হাদিসও। এখানকার মানুষের ব্যাপারেও আছে হাদিস। এতসব কিছু ছাড়া ফিলি স্তিনের যে অধ্যায়টি আমাদের হৃদয়ের সাথে সংযুক্ত, সেটা হলো ফিলি স্তিন হচ্ছে— শ হী দদের ভূমি। এখানে নিয়মিত সেই অমূল্য নেয়ামত লাভে ধন্য হচ্ছে মানুষ, যে নেয়ামত পেলে জীন্দেগী অতিবাহিত করা স্বার্থক। সেই নেয়ামতের কল্যাণে যারা সেখানে বাস করে তারা মুহূর্তেই পৌঁছে যায় জান্নাতের দোরগোড়ায়। ফিলি স্তিন ও ফিলি স্তিনের মানুষকে ভালো না বেসে কি পারা যায়!
সবগুলো কারণেই আমরা ফিলি স্তিনকে ভালোবাসি। ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে পরিবারের মধ্যে বসে এগিলোর আলোচনা তাঁদেরকে শুনাবেন, তাদেরকে বুঝবেন যেনো তাদেরকে ঈমান মজবুত হয় ও আল্লাহ বলা প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিবেন।
ঈদের মার্কেট নিয়ে ব্যস্ত না হয়ে আমাদের ভাই-বোনদের জন্য দোয়া করা ও তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করা সেটা যে কোনো মাধ্যমেই হোক,কারণ আল্লাহ তাআলা কিয়ামত এর দিন আমাদেরকে প্রশ্ন করবে তারা যখন অত্যাচারের শিকার হয়েছিল তখন তোমরা কি করেছ তোমরা কি দেখনি? তখন কি উত্তর দিবেন এই প্রশ্নের!
এই রমজানে এবং জুমার রাতে মন থেকে আল্লাহকে বলি যেনো আল্লাহ তাদেরকে খুব তাড়াতাড়ি এই অত্যাচার থেকে একেবারে মুক্তি করে দেন।
আমীন.......
Comments
Post a Comment