ইতেকাফ কি ও কিভাবে করতে হয়। ইতেকাফের ফজিলত কি?ও রমজানের শেষ ১০ দিন আমরা কিভাবে কাটাবো



 *** ইতেকাত অর্থ কি?

 ••ইতিকাফ শব্দের শাব্দিক অর্থ হল স্থির থাকা, আবদ্ধ থাকা, অবস্থান করা, বা নিজেকে কোনো স্থানে আবদ্ধ করে রাখা।

 ••ইসলামি পরিভাষায় নির্ধারিত সময়ে সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে পার্থিব ও জাগতিক সব ধরনের সংস্পর্শ ত্যাগ করে শর্তসাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে  পুরুষেরা মসজিদে আর মহিলারা নিজেদের গৃহে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে।


*** নারীরা যেভাবে ইতিকাফ করবেন,

একটি কক্ষে নির্জনে নিয়ত করে ইবাদত-বন্দেগির জন্য অবস্থান করে ইতিকাফ করতে পারেন। নারীগণ ইতিকাফের আগে স্বামীর সম্মতি নেবেনঅবশ্যই।

কোনো কারণে স্বামী যদি ইতিকাফ ভাঙতে বলে তাহলে তা ভঙ্গকরার আবশ্যকতা আছে। আর যদি ইতিকাফকারী নারীর ঋতু শুরু হয় তাহলে সে ইতিকাফ ছেড়ে দেবেন।


*** আরো যেসব কারণে ইতেকাফ ভেঙে হয় :-

১.ওজর বশত বের হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিলম্ব করা, 

২. বিনা কারণে মসজিদের বাহিরে যাওয়া, 

৩. স্ত্রী সহবাস করা,

 ৪. ভয়ের কারণে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া।


*** ইতেকাফের প্রকার সমূহ,

১. সুন্নাত ইতিকাফ : রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ। অর্থাৎ ২০ রমজানের সূর্য ডোবার আগ মুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করা। ...

২. ওয়াজিব ইতিকাফ : নজর বা মানতের ইতিকাফ ওয়াজিব। ...

৩. নফল ইতিকাফ : সাধারণভাবে যেকোনো সময় ইতিকাফ করা নফল।


••সুন্নাত ইতিকাফ : রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ। অর্থাৎ ২০ রমজানের সূর্য ডোবার আগ মুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করা। এ ধরনের ইতিকাফকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া বলা হয়। গ্রাম বা মহল্লাবাসীর পক্ষে কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি এই ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে।

••ওয়াজিব ইতিকাফ : নজর বা মানতের ইতিকাফ ওয়াজিব। যেমন কেউ বলল যে, আমার অমুক কাজ সমাধান হলে আমি এত দিন ইতিকাফ করব অথবা কোনো কাজের শর্ত উল্লেখ না করেই বলল, আমি এত দিন অবশ্যই ইতিকাফ করব। যত দিন শর্ত করেছে তত দিন ইতিকাফ করা ওয়াজিব। ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। সুন্নাত ইতিকাফ ভঙ্গ করলে তা পালন করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

••নফল ইতিকাফ : সাধারণভাবে যেকোনো সময় ইতিকাফ করা নফল। এর কোনো দিন কিংবা সময়ের পরিমাপ নেই। অল্প সময়ের জন্যও ইতিকাফ করা যেতে পারে। এ জন্য মসজিদে প্রবেশের আগে ইতিকাফের নিয়ত করে প্রবেশ করা ভালো।


ইতিকাফের উদ্দেশ্য :-

ফরজ ইবাদত ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যেসব ইবাদত করা হয় তার মধ্যে ইতেকাফ একটি অন্যতম ইবাদত। 

আত্মার উৎকর্ষ সাধনের জন্য সব ধরনের কুপ্রবৃত্তি দমন করে যেমন-- অনর্থক কাজ, অশ্লীল কথাবার্তা, সংসার, স্ত্রী, পুত্র, বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সব ধরনের দুনিয়াদারির কাজকর্ম পরিত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের জন্য তাঁর দরবারে দিনরাত্রি পড়ে থাকাই ইতেকাফের মূল লক্ষ্য।

 ইতিকাফের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির মাধ্যমে আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভ। ইতিকাফের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইবনুল কাইয়্যেম বলেছেন, ‘আল্লাহর প্রতি মন নিবিষ্ট করা, তাঁর সাথে নির্জনে বাস করা এবং স্রষ্টার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি থেকে দূরে অবস্থান করা, যাতে তার চিন্তা ও ভালোবাসা মনে স্থান করে নিতে পারে।’



*** ইতিকাফ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো, মুসলমান হওয়া, মানসিকভাবে সুস্থ হওয়া, মাসিক ও সন্তান প্রসব পরবর্তী অবস্থা থেকে পবিত্র হওয়া।

ইতিকাফ অবস্থায় নফল নামাজ আদায় করা, কোরআন-হাদিস তিলাওয়াত করা, জিকির করা, জ্ঞান শেখা ও শেখানো, ইসলামি বইপত্র পড়াসহ সব সওয়াবের কাজ করা বৈধ। 

অহেতুক আলোচনা না করা, প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া,

ইতিকাফের জায়গা ত্যাগ করার অনুমতি নেই।


*** ইতেকাফে নবীয়ে করিম (সা.)-এর বিশেষ আকর্ষণ ছিল। তিনি প্রতি বছর রমজান মাসের ইতেকাফের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করতেন। তিনি কখনো পুরো রমজান মাস ইতেকাফ করেছেন। ১০ দিনের ইতেকাফ তো তিনি প্রতি বছর অবশ্যই করতেন। একবার বিশেষ কারণে রমজান শরিফে ইতেকাফ করতে পারেননি, তাই শাওয়াল মাসে ১০ দিন রোজা রেখে তিনি ইতেকাফ করেছেন (বুখারি শরিফ)।


হজরত ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। (বোখারি: ২০২৫)


কিছু লোক মসজিদের জন্য খুঁটি হয়ে যান (অর্থাৎ এরা সর্বদাই মসজিদে অবস্থান করে)। ফেরেশতারা মসজিদে এরূপ মুমিনের সঙ্গী হয়ে যান। এরূপ লোকেরা যদি কখনো মসজিদে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে ফেরেশতারা তাঁদের অনুসন্ধান করেন, অসুস্থ হলে তাঁদের দেখতে যান এবং তাঁদের কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে ফেরেশতারা তাঁদের সাহায্য করেন।

••• নবীজির ইতিকাফ সম্পর্কে কিছু হাদিস,

হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করবে সে দুটি ওমরাহ ও দুটি হজ আদায় করার সওয়াব পাবে। ’

হজরত আয়েশা (রা.) আরো বলেন, ‘নবী করিম (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ পালন করতেন। তাঁর ওফাতের আগ পর্যন্ত তিনি ইতেকাফ পালন করে গেছেন। তারপর তাঁর পত্নীরাও তা পালন করেছেন। ’ হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ইতেকাফকারী নিজেকে পাপ থেকে মুক্ত রাখে এবং তাঁর জন্য পুণ্যসমূহ জারি রাখা হয়। (মিশকাত)

অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি একদিন ইতেকাফ করে আল্লাহপাক তাঁর এবং জাহান্নামের মধ্যে তিন খন্দক দূরত্বের ব্যবধান রাখবেন। এই দূরত্ব হবে আসমান ও জমিনের দূরত্বের চেয়েও অধিক।



*** ইতিকাফ অবস্থায় যা বর্জণীয়:-

১.চুপচাপ বসে থাকা,
 ২. গীবত বা পরনিন্দা না করা। 
 ৩.জিনিসপত্র মসজিদে এনে বেচাকেনা করা, ৪.ঝগড়া করা, 
৫. অনর্থক কথাবার্তা বলা, 
৬. অপ্রয়োজনীয় গল্প জুড়ে দেওয়া।

*** ইতিকাফ অবস্থায় যেসব কাজ বৈধ:- 

১.মসজিদে আহার করা,
 ২. পেশাব-পায়খানার জন্য বাহিরে যাওয়া, 
৩. আজান দেওয়া জন্য বাহিরে যাওয়া ৪.গোসলের জন্য বাহিরে যাওয়া, 
৫. জুমার নামাজের জন্য এতটুকু সময় নিয়ে বের হ‌ওয়া যাতে নিকটবর্তী জামে মসজিদে গিয়ে খুতবার পূর্বে ২/৪ রাকাত সুন্নাত আদায় করা যায়।


*** ইতেকাফ ও সময় ম্যানেজমেন্ট বা রুটিন,

 ••ইফতারির পর সালাত, মাসনুন আমল শেষ করেকিছুক্ষন ঘুম 

••ঘুম থেকে উঠি নামাজ ও সালাতুত তারাবিহ আদায় করা মহিলাদের ঘরের কাজসমূহ থাকলে খুব দ্রত আদায় করা।

••একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত কুরআন তিলওয়াত ও তাদাব্বুর করা,

 •• রাত দুটো থেকে সাড়ে তিনটে অব্দি তাহাজ্জুদও দুয়ারা মাধ্যমে সময় কাটানো।

••সাড়ে তিনটা থেকে চারটার মাঝে দোয়া ও তাহাজ্জুত শেষ করা।

••চারটা থেকে সেহরি খাওয়া, ও ফজরের আগ পর্যন্ত ইস্তিগফারও দুয়া করা। এভাবে নিজের টাইম মতো সময় গুলোতে সকল আমল করা।


***দোয়াতে স্পেশাল কিছু আমল,

••নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে দুয়ার একটি পার্ট অবশ্যই ফিক্সড করে নিতে হবে। সবচাইতে ভালো হয় যদি দুয়ার লিস্ট করতে পারে,

•• মৃতদের নাম ধরে ধরে দুয়া।

 ••আমার আশেপাশে পরিচিত অন্তত দশজন ব্যক্তির নাম ধরে দুয়া।

••ইস্তিগফার, ইসমে আজম, দুরুদ, কুরআন ও সুন্নাহ দুয়াগুলি নিয়মিত চর্চা করা, এবং এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর মারেফাতের নূর চাওয়া।

•• আল্লাহর কাছে অন্তর্চক্ষু, আল্লাহওয়ালাদের সান্নিধ্য , রাসুলুল্লাহর (ﷺ) শাফাআত ও কাবার মেহমান হওয়ার দাওয়াত চেয়ে আকুল আবেদন করা। এবং এতটাই ইফোর্ট দেওয়া যে আপনাকে দুআ করার পর শান্ত হয়ে যাবেন এটা ভেবে যে (ইনশাআল্লাহ) আল্লাহ আপনার দুয়া কবুল করে নিয়েছেন।

••বিশেষ করে নূন্যতম তিনদিন বা যতদিন সম্ভব সময়ের জন্য ইতিকাফে বসা। ইতিকাফে না বসলে বোঝা যায় না সময়ের বারাকাহ কী, আল্লাহর প্রেম কী, কুরআনের নূর কী।

••যারা অবিবাহিত তাদের জন্য এটাই শেষ সুবর্ণ সুযোগ ভেবে লুফে নিন এই অফারটি। জেগে উঠুন প্রেমময় রবের ভালোবাসায়। প্রতিটি মুহূর্ত এক অনন্য ভালোবাসাকে সঙ্গী করে কাটান। ঠিক করুন ক্বদর আমাকে পেতেই হবে!

আর এভাবে আমলের মাঝে নিজেকে নিয়োজিত রাখলে ইনশাল্লাহ কদর পাওয়ার আশা করা যায়।

আল্লাহ তাঁয়ালা সঠিক বুঝ ও রমজান মাসের সম্মান বজায় রেখে সকলকে চলার তৈফিক দান করুণ।









Comments

Popular Posts