শবে কদর কী? শবে কদরের হিকমত কী? শবে কদরের আমল কী? শবে কদরের জিকির সমূহ কী কী? হাযেয়া মহিলারা শবে কদরের আমলে কিভাবে শরিক হবে!

২৫-৩-২০২৫,
সময় ৯:৪০ 
২৪শে রমজান।


*** কদর (ফার্সি: شب قدر) বা লাইলাতুল কদর (আরবি: لیلة القدر) এর অর্থ "অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত" বা "পবিত্র রজনী"। ফার্সি ভাষায় "শাব" ও আরবি ভাষায় "লাইলাতুল" অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী, অন্যদিকে ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হল ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা

 অর্থাৎ শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণাগুণ, সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। তাই এই রাতটি মুসলমানদের জন্য ভাগ্য রজনী হিসেবে সম্মানিত। ভাগ্যরজনী শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত। লাইলাতুল কদরের রাত হচ্ছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত।


*** শবে কদর কি শুধু ২৭এ  রমজানের নাকি অনির্দিষ্ট! এটা নিয়ে এখনো অনেকে সন্দেহের মাঝে বসবাস করে। 

অনেকে মনে করে থাকেন যে শবে কদর শুধু ২৭ই রমজানের রাতে হয়ে থাকে, আর  সেটা মনে করার ও অনেকে কারণ আছেন যেমন আমরা যেখানে থাকি দেখা যাই ২৭ই রাতের জন্য অনেক আয়েজন করা হয়, মসজিদ লাইটিং ও  সকলের খানাদানার ব্যবস্থা ইত্যাদি আরো অনেক কাজ করা হয় যা একেবারে আমার কাছে ভালো মনে হয়না, কারণ যে জিনিস নির্দিষ্ট না যেটাকেতো আপনি আমি চাইলে ও নির্দিষ্ট করতে পারবোনা? বাদ বাকি অনেক ছোট বাচ্চা বা দ্বীন সম্পর্ক কম জানা লোকেদেরকে মনের একটা অনির্দিষ্ট বিষয় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলো এটা অনুযায়ী আমল করা শুরু করে দিবে, আমি অনেক পরিবারকে এমনও দেখেছি তাদেরকে যদি বলা হয় যে আপনারা ২১ ২৩-২৫ এসব রাতেও শবে কদরকে তালাশ করেন তখন তারা সুন্দর করে উত্তর দেয় আর যুক্তি সহকারে বুঝিয়েও দেয়  যে, অমুক অমুক অমুক মসজিদে ২৭ শে রমজানের দিন নামাজ হয় কারণ সেদিন শবে কদর তাহলে আমরা কেন ২১ ২৩ ২৫ ২৯ পালন করতে যাবো। হ্যাঁ তাদেরকে বুঝাই দি যে এটা নির্দিষ্ট না আপনারা এসব দিনেও ফজিলত পূর্ণ  রাতকে তালাশ করেন পালন করেন, তারা আমার বা আমার মতো যারা জানেনা এমন লোক বা মহিলাদেরকে জানানোর চেষ্টা করেছেন বা প্রতিনিয়ত করেই যাচ্ছেন খেয়াল করলে দেখা যাবে অনেকে লোক বা মহিলা আমাদের কথা শুনে ঠিক কিন্তু মানার চেষ্টা করে না বা মন থেকে সেটা মেনে নিতে পারে না, কারণ চোখে দেখা এক জিনিস আর কারো কাছে শুনে মানা অন্য জিনিস,অনেকে মসলিম লোকেরা বা মহিলাদেরা দুনিয়ার সব কিছু সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলে ও অনেকক্ষেত্রে কোনো কিছু চোখের সামনে চলমান দেখলে সেটা কিনা সঠিক নাকি ভুল হচ্ছে সেটা আর খুঁজে দেখার প্রয়োজন বোধ করেনা,তারা ভেবেই নেয় যে সকলের সামনে কী আর ভুল কিছু করতে পারবে! 

তাই আমি মনে করি যারা দেখে এমন কোন ধারণা পোষণ করে, তাদের দোষের থেকেও যারা এগুলো দেখাচ্ছে তাদের দোষটা বেশি, কারণ তারা যদি এমন একটা নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট কিছু আকর্ষণ না আনতো, তাহলে দেখা যেত সকলেই দিনের এইসব বিষয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ পোষণ করত এবং যারা জানে তাদের কাছে গিয়ে জানার চেষ্টা করতো। ফলে তারা সঠিক তা জানতে পারতো, এবং সে অনুযায়ী শবে কদর কে খুঁজতে বা তালাশ করতে পারতো, হ্যাঁ যেসব মসজিদ বা যেসব মানুষের ইচ্ছা যে সর্বপ্রথম সম্পর্কে একটু আলাদা কিছু করবে বা আকর্ষণ আনার চেষ্টা করে তাহলে তারা প্রতিটা বিজোড রাতেই এমন আকর্ষণ করুক, তা না করে শুধু নির্দিষ্ট ২৭শে রাত নিয়ে কেনো এতো মাথা ব্যথা উঠে কেউ কী জানে যে ২৭ শে রাতই হবে! যদি একুশে রাত বা ২৫ শে রাত বা ২৯ শে রাত হয়ে থাকে শবে কদর, কোন মুসলমানকে ইবাদাত থেকে বিমুখ না করে বরঞ্চ সকলকে ইবাদাতমুখী করাই তো একজন মুসলমানের কাজ, তাই আমরা মুসলমান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ওই কাজটাই আদায় করা, তবে কিছু সময় দেখা যায় যে মানুষের ভালোর জন্য যদি এমন কিছু করা প্রয়োজন হয় তাহলে এমন কিছু হক নিষেধ তো নাই, তবে বিষের পরে প্রতিটা রাতেই এমন উদযাপন করেন।

 

*** শবে কদর অনির্দিষ্ট থাকার কিছু হিকমত ও রয়েছে।

কোন রাত শবেকদর? তা নিশ্চিত করে বলার জন্য নবীজি ঘর থেকে বের হয়ে সাহাবিদের কাছে আসছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে দুজন মুসলমানের ঝগড়া শোনে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যেও অনেক হিকমত (মঙ্গল) রয়েছে : 


••শবেকদর নির্দিষ্ট থাকলে শবে কদরের আশায় তখন অন্য রাতেও মানুষ যে ইবাদত করে তা একেবারে ছেড়ে দিতো।আমলের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেতো না,নির্দিষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া ফলে মানুষ শুধু সেই রাতেই ইবাদতে মনোযোগ দিত এবং অন্য রাতগুলো অবহেলা করেখে কাটিয়ে দিতো।কিন্তু নির্দিষ্ট না থাকার কারণে মানুষ পুরো রমজান জুড়ে বিশেষত শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে বেশি ইবাদত করতে আগ্রহী হয়।


••পবিত্র কোরাআন শরীফের বর্ণনা অনুসারে, আল্লাহ এই রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই একটি মাত্র রজনীর উপাসনা হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

 হতে পারে যেমন এই রাতে মর্যাদা রয়েছে, ঠিক তেমনি এই রাতটাকে গোপন রাখা হয়েছে, মানুষ গুপ্তধনের আশায় অনেক কিছু করে আর গুপ্তধন থাকে লুকায়িত। যে জিনিসটা প্রকাশ থাকে সেটা সবাই জানে বা পাওয়ার আশা করে আর যে জিনিসটা লুকায়িত থাকে সে জিনিসটার আলাদা একটা গুণ থাকে হতে পারে সেটা বোঝানোর জন্যই এমন বরকতময় রাতকে গোপন রাখা হয়েছে।


•• অনেক  সময় দেখা যাই যে,কিছু কিছু লোকের সব সময় গুনাহ হয়েই থাকে, সে না চাইলেও তাদের গুনাহ হয়েই থাকে। আর যদি নির্দিষ্ট করে জানানো থাকতো যে ২১/২৩/২৫/২৭/২৯  যে কোনো একটি রাত নির্দিষ্ট আর মুসলিম বান্দা সে রাতে ও প্রতি রাতের মতো গুনাহ করে শবে কদরের মতো  এতো মহা মর্যাদাবান রাত জেনেও তারা যদি গুনাহ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে না পারতো তাহলে সে মুসলিম তো ধ্বংস হয়ে যেত।


••সকল রাতের মর্যাদা বৃদ্ধি হয়ে গেছে শবে কদর গোপন থাকার কারণে।

যেহেতু কদরের রাত নির্দিষ্ট নয়, তাই মুসলিমরা পুরো শেষ দশকের রাতগুলোতেই গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত করে। এর ফলে প্রতিটি রাতের গুরুত্ব ও বরকত  আগের রাত গুলো থেকে ও বেড়ে যায়,

শবেকদর নির্দিষ্ট থাকলে দুর্ভাগ্যবশত : যদি কারও সে রাতে ইবাদত করা হয়ে না উঠতো, তাহলে সে চরম হতাশ হয়ে রাত্র জাগরণই একেবারে ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম হতো।


••এখন শবে কদর অনির্দিষ্ট থাকায় যতো রাতই জাগরণ করবে মুমিন তার জন্য পৃথক পৃথক সওয়াব প্রাপ্ত হবে। হতে পারে বান্দা শবে কদরের ফজিলত অর্জনের নিয়তে রাত্র জাগরণ করছে, এর এই রাত্রি জাগরণ করেছে বিধায় যত রাতেই জাগরণ করবে প্রতি রাতেই শবে কদরের সওয়াব প্রাপ্ত হবে। 

কেননা হাদিস এ আসে নবি করিম  (সা :)  বলেছেন, সমস্ত কাজ ওই নিয়তের উপর নির্ভর করে।

 নিয়ত দ্বারা একই আমল বহু আমলে পরিণত ও হতে পারে, যেমন কেউ যদি মসজিদে যাওয়ার নিয়ত করে আর জামাতে নামায পড়ার সাথে সাথে এই নিয়তও রাখে যে, সে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেবে, মু'মিনদের দেখা পেলে সালাম দেবে, মু'মিনদের খোঁজখবর নেবে, রুগ্ন ব্যক্তির দেখা পেলে তার সেবা করবে ইত্যাদি, শুধু সে নিয়ত করেছে এখন। সে যদি মসজিদে যাওয়ার সময় এসে যা যা নিয়ত করেছে সব কাজ সম্পন্ন করতে নাও পারে,তাহলে সে নিয়তের কারণেও ঐ সব কাজ করার ছওয়াব পাবে। 

কাজ তো হয়েছে একটি অর্থাৎ মসজিদে যাওয়া,কিন্তু নিয়ত যেহেতু ছিলো অনেকগুলো, তাই সে অনেক গুলো আমলের ছওয়াবের অধিকারী হয়ে যাবে।


عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:

«إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّةِ، وَإِنَّمَا لِامْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ، فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ». وفي لفظ للبخاري: «إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى».  

[صحيح] - [متفق عليه] - [صحيح مسلم: 1907]


‘উমার ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

“প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। কাজেই যার হিজরত হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে হয়েছে বলেই ধরা হবে। আর যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভ অথবা কোন নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, তবে তার হিজরত সেই উদ্দেশ্যই ধরা হবে।” বুখারীর শব্দাবলী এমন: “প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর নিশ্চয় প্রতিটি মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে।”  

[সহীহ] - [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।] - [সহীহ মুসলিম - 1907]


•••আল্লাহর রহস্যপূর্ণ ইলমের ও তার প্রতি বিশ্বাস আরো বাড়ানোর জন্য ও হতে পারে।

এটি আল্লাহর এক বিশেষ রহস্য, যা মানুষের জ্ঞানের বাইরে। এভাবে আল্লাহ তাঁয়ালা তাঁর বান্দাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সীমাহীন, যা মানুষ পুরোপুরি উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়।, তাই আল্লাহকে রাজি খুশি করতে হলে মাঝে মাঝে আমাদেরকে ও সীমাহীন চেষ্টা করতে হবে।

হতে পারে এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা মানুষের ইখলাস (নিষ্ঠা) পরীক্ষা করতে চান। যাঁরা সত্যিকারের নেককার বান্দা, তাঁরা শুধু একটি নির্দিষ্ট রাতের জন্য নয়, বরং নিয়মিত ইবাদত করতে আগ্রহী থাকবেন, এবং মানুষ যখন লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য বারবার চেষ্টা করে, তখন তার ধৈর্য ও আত্মসংযম আরো বৃদ্বি পাবে ব। এটি হতে পারে  মুমিনের জন্য আত্মগঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

এই কারণে রাসূল (সা.) আমাদের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে বলেছেন এবং বেশি বেশি ইবাদত করতে উৎসাহিত করেছেন।




*** ৬১০ সালে শবে কদরের রাতে মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের নিকট সর্বপ্রথম কুরআন নাজিল হয়। সর্বপ্রথম তার নিকট প্রথম সূরা আলাক্বের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়।



**মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল হওয়ার কারণে অন্যসব মাসের চেয়ে রমজান মাস বেশি ফজিলত ও বরকতময় হয়েছে। আর রমজানের রাতগুলোর মধ্যে কোরআন নাযিলের রাত লাইলাতুল ক্বদর সবচেয়ে তাৎপর্যমণ্ডিত একটি রাত। 


এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি একে নাযিল করেছি কদরের রাতে। তুমি কি জান ক্বদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরা: কদর, আয়াত: ১-৩)।  

এ আয়াতের ব্যাখায় মুফাসসিরকুল শিরোমণি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘এ রাতের ইবাদত অন্য হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম’।

(তানবিরুল মিকবাস মিন তাফসিরে ইবনে আব্বাসঃ ৬৫৪ পৃষ্ঠা)।

••• রমজান মাস পবিত্র কুরআন নাযিলের মাস। শবে কদর কুরআন নাযিলের রাত। এ রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমার হেরা পর্বতের গুহায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের সরদার হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল করেন। 


এ কারণে আল্লাহ তায়ালা এ রাতের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ রাতে মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদিকে হাজার মাসের ইবাদত-বন্দেগি ও আমলের সমান সাওয়াব দান করে। কুরআনুল কারিমের অন্য স্থানে এ রাতটিকে বরকতময় রাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন- হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে (কুরআন) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ 

                               (সুরা দুখান : আয়াত ১-৬)


কুরআন নাযিলের কারণে মর্যাদার এ রাতের কথা উল্লেখ করার পর যে মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে সে মাসের কথাও আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে উল্লেখ করেছেন এভাবে-


আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘রমজান মাস! এমন একটি মাস যে মাসে কোরআন নাযিল হয়েছে মানবের মুক্তির দিশারি ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে। ’ 

                  (সুরা-২ আল বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।


সুতরাং লাইলাতুল ক্বদরের রাতে আল্লাহর ওইসব বান্দারা সবচেয়ে বেশি সম্মানিত ও মর্যাদার অধিকারী হবেন, যাদের সঙ্গে কুরআনের সম্পর্ক বেশি। যিনি কুরআন-সুন্নাহর আলোকেই নিজের জীবন পরিচালিত করবেন। বাস্তবজীবনে কোরআন-সুন্নাহর আমলে সাজাবেন জীবন। আর তারাই হবেন সফল।




রমজানের শেষ দশদিনের যেকোনো বেজোড় রাতে লাইলাতুলকদর তালাশ করা যায়, অর্থাৎ ২১,২৩,২৫,২৭,২৯ রমজান দিবাগত রাতগুলো। তবে অনেক আলেমদের গবেষণা ও ব্যাখ্যায় এবং বুজুর্গানেদ্বীনের মতে ২৬ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ সাতাশ তারিখে পবিত্র শবে কদরের অন্যতম সম্ভাব্য রাত। 

 তবে কিন্তু একেবারে নিশ্চিত না তাই প্রত্যেকটা রাতকেই আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে।




হাঁ, সে কদরের রাতের কিছু আলামত হাদীসে বর্ণিত আছে। সেগুলো হল,

 *** রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে। অতঃপর আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড রাত্রিতে তা তালাশ কর।

        আলামত গুলো হলো,

•••  রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না।


•• নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না।


••• মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে।


••• সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে।


••• কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন।


•••ঐ রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে।


•••সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত। (সহীহ ইবনু খুযাইমাহ: ২১৯০; বুখারী: ২০২১; মুসলিম: ৭৬২)



*** শবে কদরের আলামত সম্পর্কে নবীজীর (সা.) বয়ান,

•• হজরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘...ওই রাতের আলামত বা লক্ষণ হলো, রাত শেষে সকালে সূর্য উদিত হবে তা উজ্জ্বল হবে। কিন্তু সে সময় (উদয়ের সময়) তার কোনো তীব্র আলোকরশ্মি থাকবে না। (মুসলিম : ১৬৭০)

•• নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরের রাতটি হবে প্রফুল্লময়। না গরম, না ঠাণ্ডা। সেদিন সূর্য উঠবে লালবর্ণে, তবে দুর্বল থাকবে।’ (ইবনে খুযাইমা : ২১৯২)

••• হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘লাইলাতুল কদর শেষ ১০ রজনীতে রয়েছে। যে এই রাতে নিজের (আমলের) হিসাব নিতে দাঁড়াবে, আল্লাহ তায়ালা তার পূর্বের এবং পরের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আর কদরের রাত্রি আছে বেজোড় রাত্রিগুলোতে : নবম, সপ্তম, পঞ্চম, তৃতীয় এবং শেষ রাত।’

••• নবীজি আরও বলেন, ‘লাইলাতুল কদরের আলামত হচ্ছে, স্বচ্ছ রাত, যে রাতে চাঁদ উজ্জ্বল হবে, আবহাওয়ায় প্রশান্তি (সাকিনা) থাকবে। না ঠাণ্ডা, না গরম। সকাল পর্যন্ত (আকাশে) কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না। সে রাতে চাঁদের মতোই সূর্য উঠবে (তীব্র) আলোকরশ্মি ছাড়া। শয়তান সে সময় বের হয় না।’ (মুসনাদ আহমাদ : ২২৭৬৫)।

••• নবীজি (সা) আরও বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর উজ্জ্বল একটি রাত। না গরম, না ঠাণ্ডা। সে রাতে কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়িদ : ৩/১৭৯)।




*** হ্যা শবে কদর তালাশের আমরা যেভাবে রাত গুলোকে আমলের মাধ্যমে কাটাবো, সে সমস্ত আমল গুলো হলো,

••• লাইলাতুল কদরের রাতে কিভাবে নামাজ পড়তে হয়?

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাত অনুযায়ী লাইলাতুল কদরের নামাজ আদায় করার জন্য, তিন রাকাত বিতরের পর আট রাকাত নামাজ পড়তে হত। আয়েশা (রাঃ) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রমজানে বা অন্য কোন সময়ে এগারো রাকাতের বেশি নামাজ পড়তেন না।

•••  মহিমান্বিত এ রজনীর সব নেয়ামত হাসিলের জন্য প্রথমেই শিরকমুক্ত ঈমান পরিশুদ্ধ নিয়ত ও বিদায়াতমুক্ত আমলের মাধ্যমে রাত যাপন করতে হবে।

•• কদর লাভের আশায় শেষ দশ দিনে ইতিকাফ করা।

•• বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া।

•• কোরআন তেলাওয়াত করা। দোয়া-দরুদ, দান-সদকা ও তাওবা-ইসতিগফার করা।

••লাইলাতুল কদর আমাদের জন্য একটি উপহার, যা আমাদের পবিত্র করার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে যাতে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন। প্রচুর যিকির ও দুআ করার পরামর্শও দেওয়া হয়। দুআ করার সময়, আল্লাহর দিকে ফিরে আন্তরিকতা ও বিনয়ের সাথে প্রার্থনা করুন। 


*** রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের লাইলাতুল কদরে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুআ শিখিয়েছেন:

الْلَّهُمَّ اِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউউন (করিমুন) তুহিব্বুল ‘আফওয়া ফা’ফু’ আন্নি

হে আল্লাহ, তুমি ক্ষমাশীল, (দয়ালু) তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, তাই আমাকে ক্ষমা করো।



*** লাইলাতুল কদরের কিছু যিকির:---

••• আল্লাহু আকবর (ঈশ্বর সর্বশ্রেষ্ঠ)

••• সুবহানাল্লাহ (আল্লাহর মহিমা)

••• আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)

•• আস্তাগফিরুল্লাহ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি)

•• লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া 'আলা হুল্লি শাই'ইন কাদীর 

(আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই। তিনিই সার্বভৌম, তাঁর প্রশংসা, এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান)

•• সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহি আল-আযীম 

(আল্লাহর পবিত্রতা এবং তাঁর প্রশংসা, সর্বশক্তিমান আল্লাহর পবিত্রতা),

•• লা ইলাহা ইল্লা আনতা, সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিন আল-যালিমীন

 (আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তুমি পবিত্র, আমি অবশ্যই যালিমদের একজন

 ছিলাম)।


*** অনেকে মনে করে থাকেন যে, শবে কদরের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত আছে?

 অথবা অনেকে মনেকের মনে প্রশ্ন থাকে যে শবে কদরের জন্য কি কোন নির্দিষ্ট আমল বা নামাজ রয়েছে কিনা??

তাদের জন্য বলি শবে কদরের রাত জন্য কোন নির্দিষ্ট ইবাদত নির্ধারিত নেই । 

 আবারো বলি যে শবে কদরের রাতের জন্য নির্দিষ্ট কোন ইবাদত নেই।

তবে, মুসলমানদের এই মূল্যবান সময়ে নবী (সাঃ) এর সুন্দর উদাহরণ অনুসরণ করতে এবং তাদের ইবাদতকে যতটুকু বাড়ানো সম্বব সর্বাধিক বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করা হয়।

 হয়রত আয়েশা (রাঃ) বলেন,

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শেষ দশ রাতে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে ইবাদতে লিপ্ত থাকতেন।”  

                      (মুসলিম)।




*** হাযেয়া মহিলারা অর্থাৎ মাসিকের সময়  মহিলারা লাইলাতুল কদরের রাতে কিভাবে আমল করবে কারণ সে তো নামাজ পড়তে পারবেনা?

যদিও আমাদের মাসিকের সময় রোজা রাখা এবং নামাজ পড়া নিষিদ্ধ, তবুও আমাদের জন্য অনুমোদিত আছে সে সব ইবাদতের আমল গুলো বৃদ্ধি করা উচিত।  

 আন্তরিকভাবে দু'আ  ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর দরুদ পাঠ করা এবং যিকিরের মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত রাখা।

**মহিলাদের জন্য হাযেয় অর্থাৎ মাসিকের সময় নামাজ বা তাওয়াফ ছাড়া সকল উপায়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা জায়েজ।

হোক যিকির করা মধ্যেমে বা দুআ করার মাধ্যমে বা তালবিয়া পড়া মাধ্যমে বা কোন নির্দিষ্ট একান্ত তাসবীহের আমলের মাধ্যমে, সে যেভাবেই আল্লাহকে ডাকতে চায ডাকতে পারে তার ইচ্ছাধীন আমলের মাধ্যমে।




 সবশেষে একটাই কথাই

*** এই রাত গুলোতে কমপক্ষে দু রাকাত হলেও নফল নামাজ পড়বেন আরো বেশি পড়লে তো ভালো কারণ যদি এ রাতে শবে কদর হয়ে যাই তাহলে ৮৩বছর নামাজের সাওয়াব পেয়ে যাবেন।

 **দিন অন্তত ১টাকা হইলেও দান করেন, যদি সেদিন শবে কদর হয়ে যায় তাহলে ৮৩ বছর দান করার ছওয়াব পাবেন।

 ** আর প্রতিদিন তিনবার করে সূরা ইখলাস পড়বেন, এতে করে ৮৩ বছর পবিত্র কোরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যাবে।


 'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ'ফুয়্যুন; তুহিব্বুল আ'ফওয়া; ফা'ফু আ'ন্নী।’

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

Comments