চাঁদ রাতের গুরুত্ব ও তার গুনাগুন সম্পর্কে আলোচনা।

                            ৩১-০৩-২০২৫,

                    শাওয়াল মাসের ১তারিখ।



"" শাওয়াল মাসের আগমন ও রমজান মাসের প্রত্যাবর্তন ।

*** আজকে আলোচনা করতে চাই চাঁদ রাতের বেপারে অর্থাৎ রমজান মাসের শেষ রাত নিয়ে যে রাত আমরা আমাদের ঈদের আনন্দ নিয়ে সারা রাত কাটিয়েদি, আসলেই কি  যারা এতো আনন্দে এই রাত উজ্জাপন করেন তারা কি একবার চিন্তা করে দেখে না যে, এতো রহমতের একটা মাস২৯/৩০ দিন শেষ হতে না হতেই তার মধ্যে হটাৎ এতো হাসি তামাশা আসলো কি ভাবে??


••• আর অনেকে তো জানেই না যে এই রাতের  কতো যে ফজিলত!

অনেকে যেমন না জেনে সাতাশের রাতেই শবে কদরকে তালাশ করে, ঠিক তেমনি কিছু মানুষ না জেনেই এই চাঁদ রাতের আমল টা করা থেকে নিজেকে দূরে রাখতেছে।

অনেকে হয় কি চাঁদ রাতে কোনো কাজ বা গল্প গুজন করে না ঠিক, আবার কিন্তু কোনো আমল ও করে না, আর করবেই বা কিভাবে সেতো জানেই না যে চাঁদ রাতের ও অনেক ফজিলত আছেন, যেমন ফজিলত ছিলো শবে কদরের।

কেউ তো নিশ্চিত না যে সে শবে কদর পেয়েছে , কিন্তু যে চাঁদ রাতের আমল করবে সে নিশ্চিত যে, এই আমল গুলোর বরকত সে অবশ্যই পাবে।

এ রাতের ইবাদত-বন্দেগির ফজিলত ও মর্যাদা রমজানের তুলনায় কম নয়। কেননা এ রাতেও অব্যাহত থাকতে রহমত ও সৌভাগ্য।


 *** চাঁদ রাতের আমলের বিশেষ ৩টা ফজিলত।

•• এ রাতের কোনো দোয়া আল্লাহ ফেরত দেবেন না।

•• এ রাতের ইবাদতকারীর জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।

•• এ রাতের ইবাদতকারীর অন্তরের মৃত্যু হবে না।

আর এই ফজিলত পেতে হলে আমাদেরকে আজকের রাতের আমল অর্থাৎ চাঁদ রাত বা ঈদুল ফিতরের আগের রাতেকে আমল-ও ইবাদতে মধ্য দিয়ে কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। তবেই আমারা পাবো সেই আমলের প্রতিদান।


** চাঁদ রাতের ফজিলত সম্পর্কে কিছু হাদিস।

•• হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত (ইবাদতের মাধ্যমে) জাগ্রত থাকবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। তাহলো:----

১. জিলহজ মাসের ৮ তারিখের রাত৷

২. জিলহজ মাসের ৯ তারিখের রাত (আরাফার রাত)

৩. ঈদুল আজহার রাত।

৪. ঈদুল ফিতরের রাত এবং

৫. অর্ধ শাবানের রাত।

                       (আত তারগিব ওয়াত তারহিব)


*** আল্লাহ তাআলা বান্দার এ (চাঁদ) রাতের ইবাদত-বন্দেগি এবং কোনো দোয়াই ফিরিয়ে দেন না। এ রাতে বান্দা যা চায়; তা-ই পায়। হাদিসের বর্ণনা থেকে তা সুস্পষ্ট। হাদিসে এসেছে-

•• হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি জুমআর রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, অর্ধ শাবানের রাত এবং দুই ঈদের রাতসহ এ পাঁচ রাতে কোনো দোয়া করে; সে রাতে তার কোনো আবেদনই ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)

অর্থ্যাৎ আল্লাহ তাঁয়ালা আমাদের জন্য এই ৫ রাতেকে আমলের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, আর তারমধ্যে আমরা এই চাঁদরাতের আমলের বেপারে অধিক মানুষ গাফেল।


•• হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি জুমআর রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, অর্ধ শাবানের রাত এবং দুই ঈদের রাতসহ এ পাঁচ রাতে কোনো দোয়া করে; সে রাতে তার কোনো আবেদনই ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)

ঈদের আগের রাত তথা চাঁদ রাতের ইবাদতকারীর জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাত ওয়াজিব করে দেন। 

*** নতুন চাঁদ দেখে আমরা নতুন চাঁদ দেখার আমল টা ও ইনশাআল্লাহ করে ফেলবো --

•• রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো, চাঁদ দেখে রোজা ছাড়ো, ইফতার করো বা ঈদ করো।’ যে সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ দেখা যায়, সে রাত হলো ‘চাঁদরাত’। আরবি চান্দ্র বছরের নবম মাস রমজান এবং দশম মাস শাওয়াল।

রমজানের রোজার শেষে পয়লা শাওয়াল ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদ। শাওয়ালের চাঁদরাত হলো ঈদের রাত। ইসলামে যে রাতগুলো ইবাদতের জন্য এবং ফজিলতে পরিপূর্ণ, সেসবের অন্যতম এই ঈদের রাত। চাঁদরাতের প্রথম সুন্নত ও ফরজে কিফায়া আমল হলো সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদ দেখা। চাঁদ দেখলে বা চাঁদ দেখার সংবাদ নিশ্চিত হলে দোয়া পড়া সুন্নত।

(তিরমিজি শরিফ: ৩৪৫১, মুসনাদে ইমাম আহমাদ: ১৪০০, রিয়াদুস সালেহিন: ১২৩৬)।



•• আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য বর্ণনায় দোয়াটি এভাবেই এসেছে- 

اَللّهُّمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالْإِسْلاَمِ وَالتَّوْفِيْقِ لِما تُحِبُّ وَتَرْضَى رَبِّيْ وِرَبُّكَ اللهُ


উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলামি ওয়াত্তাওফিক; লিমা তুহিব্বু ওয়া তারদ্বা, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ। (সুনানে দারিমি, হাদিস : ১৬৯৭)


[{অর্থ : হে আল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান ও নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলাম এবং যে জিনিসটি আপনি পছন্দ করেন ও সন্তুষ্ট হোন— সেটার তাওফিকের সঙ্গে উদিত করুন। আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ।}]


*** আর কালকে ঈদের নামাজের আগে অবশ্যই ফিতরা আদায় করে দিবেন-- কারণ 

পবিত্র রমজানের ইবাদতের মধ‌্যে সদকাতুল ফিতর আদায় করা অন‌্যতম একটি ইবাদত। রমজানের রোজার ভুল-ত্রুটি পরিপূর্ণতার জন‌্যেই এটি আবশ‌্যক করা হয়েছে। স

আর সদকাতুল ফিতর হলো নামাজের সিজদায়ে সাহুর মতো। অর্থাৎ নামাজে ত্রুটি-বিচ‌্যুতি হলে সিজদায়ে সাহু যেমন এটার পূর্ণতা দেয়, তেমনি রোজার ত্রুটি-বিচ‌্যুতি হলে সদকাতুল ফিতর দ্বারা এর প্রতিকার হয়।


***|ঈদের রাতের বেশি বেশি নফল আমল করা, কেননা ঈদের রাতের নফল আমল খুব গুরুত্ব পূর্ণ।

•• আবু উমামা রাদ্বিয়াল্লাল্লাহু হতে বর্ণিত, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাল্লাম বলেছেন, যে ব‌্যক্তি শুধূমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির লাভের জন্য দুই ঈদের রাত জেগে ইবাদতে মাশগুল হবে, কিয়ামতের কঠিনের দিনেও তার অন্তর মরবে না, যেদিন ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় পরিস্থতির কারণে মানুষের অন্তর মারা যাবে। 

                    (ইবনু মাজাহ, হাদিস :১৭৮২)


*** চাঁদ রাতের অর্থাৎ রমজানের ঈদের রাতে আমরা সে সমস্ত আমল করতে পারি  তাহলে :----

•• পপুরুষেরা মাগরিব, এশা ও ফজর নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে পড়ার চেষ্টা করা,

এবং নারীদের আউওয়াল ওয়াক্তে ফরজ নামাজ আদায় করা। 

রাতের ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে পবিত্রতা অর্জন করা,সম্ভব হলে গোসল করা।

 ইবাদতের উপযোগী ভালো কাপড় পরিধান করা। মাগরিবের পর আউওয়াবিন নামাজ পড়া এবং কিছু দোয়ার আমল করা,শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া। 

রাত জেগে নফল ইবাদত করা। নফল নামাজ পড়া। তাহ্যিয়াতুল অজু, দুখুলুল মাসজিদ, তাওবার নামাজ, সলাতুল হাজাতের নামাজ পড়া, কাজা নামাজ থাকলে কখনো সেগুলো আদায় করা,সলাতুত তাসবিহের নামাজ সুজোগ থাকলে আদায় করা,সলাতুশ শোকর, মানন্তকৃত নামাজ থাকলে আদায় করা, কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করা, সুরা ইয়াসিন, সুরা রহমান, সুরা ওয়াকিআ, সুরা মুলক, সুরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, সূরা মুহাম্মদ, সূরা মমতাহিনা,সুরা ফাতহ, সুরা নাবা ইত্যাদি পাঠ করা। 

দরুদ শরিফ পাঠ করা, ইস্তিগফার করা, তাসবিহ তাহলিল, জিকির আসকার ইত্যাদিতে মশগুল থাকা, অর্থাৎ শবো কদর তালাশ করার মতো  নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়ে এই চাঁদ রাতকে আমলে ভরপুর করে সারা রাত কাটাতে হবে।


*** রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন ঈদের দিন, তথা ঈদুল ফিতরের দিন আসে, তখন আল্লাহ বান্দাদের বিষয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করেন। বলেন, “হে আমার ফেরেশতারা! যে শ্রমিক তার কর্ম পূর্ণ করেছে, তার বিনিময় কী?” তারা বলবে, “তাদের বিনিময় হলো তাদের পারিশ্রমিক পরিপূর্ণরূপে প্রদান করা।” বলবেন, “হে আমার ফেরেশতারা! আমার বান্দা–বান্দীরা তাদের দায়িত্ব–কর্তব্য পালন করেছে, তারপর দোয়ার উদ্দেশে বের হয়েছে। আমার সম্মান, মহত্ত্ব, করুণা, মাহাত্ম্য ও উচ্চ মর্যাদার শপথ! আমি তাদের প্রার্থনা গ্রহণ করব।” এরপর আল্লাহ বলবেন, “তোমরা ফিরে যাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের মন্দ আমলগুলো নেকিতে পরিবর্তন করে দিলাম।” নবীজি বলেন, “তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে যাবে”’

  (খুতবাহতুল আহকাম, ঈদুল ফিতরের খুতবাহ, পৃষ্ঠা: ১৬২-১৬৬)।



 পরিশেষে একটাই কথা,দ্বীনি ইলম তলব করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ। তাই প্রত্যেকটা মুসলমানকেই তার দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে, না জানলে জানার চেষ্টা করতে হবে, সেটা যে কোন মাধ্যমে হোক, আর বর্তমান যুগে কিছু জানতে চাইলে জানাটা খুব সহজ। তারপরও যদি কেউ বলে যে সে তার দিন সম্পর্কে জানে না তবে তার জানার ইচ্ছা ছিল, তাহলে সেটা কিছুটা এমন হয়ে যাবে যে, মানুষের দুইটা হাত আছে, এক হলো ডান হাত আরেকটা বাম হাত বাকি যা আছে সবকিছু অজুহাত।

 তাই নিজের দ্বীন ধর্ম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন, এবং জেনে ফজিলতপূর্ণ রাতগুলোকে আমলের মাধ্যমে শেষ করুন, এখনকার ছোট ছোট আমল গুলো পরকালে আপনার ঢাল হয়ে দাঁড়াবে।

Comments