এক সাথে রাজপথে থাকার শান্তিটাই অন্যরকম। জিহাদ অর্থ কি? কেনো জিহাদ এর বিধান আসছিলো এবং কখন আসছিলো!

                     মার্চ টু গাঁজা 

*** জিহাদ এর আভিধানিক অর্থে  হলো:-- পরিশ্রম,সাধনা,কষ্ট, চেষ্টা ইত্যাদি। 


•• জিহাদ’ শব্দের শাব্দিক অর্থ ‘সর্বাত্বক চেষ্টা-সাধনা’ হলেও ইসলামী শরীয়াতের দৃষ্টিতে জিহাদ অর্থ হলোঃ

প্রখ্যাত মুহাদ্দিস বুখারী শরীফের আরবী ভাষ্যকার ইমাম কাসতালানী (রঃ) বলেন:-

قتال الكفارلنصرة الإسلام ولإعلاء كلمة الله

“জিহাদ হলোঃ দ্বীন ইসলামকে সাহায্য করার জন্য ও আল্লাহর কালিমাকে সমুন্নত করার জন্য কাফিরদের সাথে কিতাল করা।”

*** জিহাদ এর শব্দেক আরো কিছু অর্থ রয়েছে,যেমন :--

•• ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহর দ্বীনকে (ইসলামকে) বিজয়ী করার লক্ষে এবং একমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য কুফরী তথা ইসলাম বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে মুমিনের সকল প্রচেষ্টা (দৈহিক, মানসিক, আর্থিক, জ্ঞানবুদ্ধি) নিয়োজিত করাকে “জিহাদ” বলে।


•• ইমাম কাসানী (রঃ) বলেন,

بذل الوسع والطاقة بالقتال في سبيل الله عزوجل بالنفس والمال واللسان وغير ذلك

“শরীয়াতের পরিভাষায় (জিহাদ হলো) নিজের জীবন, সম্পদ, মুখ ও অন্যান্য যা কিছু দিয়ে সম্ভব তার মাধ্যমে আল্লাহর পথে লড়াই করার জন্য শক্তি ও ক্ষমতা উৎসর্গ করা”।(আল বাদায়ীউস সানায়ী ৯/৪২৯৯)


••• পবিত্র আল কুরআনে জিহাদকে মুসলমানদের জন্য একটি ‘কর্তব্য’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে ‘হারব’ বা ‘যুদ্ধ’ শব্দ ব্যবহার না করে ‘জিহাদ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

অন্য অর্থে স্বীয় নফসের বিরুদ্ধে, শয়তানের বিরুদ্ধে, ফাসেকদের বিরুদ্ধে এবং মুশরিক-মুনাফীক-কাফেরদের বিরুদ্ধে জান-মাল ও জবান দিয়ে লড়াই করাকে “জিহাদ” বলা হয়।


•• মালেকী মাজহাবে জিহাদের সংজ্ঞা হলোঃ

قتال المسلم كافرا غير ذي عهد لإعلاء كلمة الله، أو حضوره له، أو دخوله أرضه له

“মুসলিমের জন্য আল্লাহর আইনকে সমুন্নত রাখার উদ্দেশ্যে যেসব কাফির কোন চুক্তির অধীনে নয় তাদের বিরুদ্ধে অথবা যদি তারা আক্রমণ করার জন্য মুসলিমের সামনে উপস্থিত হয় অথবা যদি মুসলিমের ভূমিতে অনুপ্রবেশ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা।” (হাশিয়া আল – আদাউয়ি, আস-সায়িদী ২/২ এবং আশ-শারহুস সগীর আকরাব আল-মাসালিক লিদ-দারদীর; ২/২৬৭)


*** জিহাদের চারটি প্রকার রয়েছে যথা :--

(১) নফসের সাথে জিহাদ, 

(২) শয়তানের সাথে জিহাদ, 

(৩) কাফের ও মুনাফেকদের সাথে জিহাদ এবং (৪) জালেম, গুনাহগার ও বিদআতীদের সাথে জিহাদ।


                                    بَاب وُجُوبِ الْجِهَادِ

أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ سَلَّامٍ قَالَ حَدَّثَنَا إِسْحَقُ الْأَزْرَقُ قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ الْأَعْمَشِ عَنْ مُسْلِمٍ عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ لَمَّا أُخْرِجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ مَكَّةَ قَالَ أَبُو بَكْرٍ أَخْرَجُوا نَبِيَّهُمْ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ لَيَهْلِكُنَّ فَنَزَلَتْ أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإِنَّ اللَّهَ عَلَى نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ فَعَرَفْتُ أَنَّهُ سَيَكُونُ قِتَالٌ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَهِيَ أَوَّلُ آيَةٍ نَزَلَتْ فِي الْقِتَالِ


জিহাদ ওয়াজিব হওয়া,

আব্দুর রহমান ইবন মুহাম্মদ ইবন সাল্লাম (রহঃ) ... ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মক্কা হতে বহিষ্কার করা হলো, তখন আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ তারা তাদের নবীকে বের করে দিল ’ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন’ তারা নিশ্চয় ধ্বংস হবে, তখন নাযিল হলোঃ

 (أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإِنَّ اللَّهَ عَلَى نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ) 

"যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল তাদের-যারা আক্রান্ত হয়েছে, কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে, আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদের সাহায্য করতে সম্যক সক্ষম।

                 (সূরা হাজ্জঃ ৩৯)। 

তখন আমি বুঝলাম, শীঘ্রই জিহাদ আরম্ভ হবে। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, জিহাদের ব্যাপারে এটিই প্রথম আয়াত।


*** প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতকে যেসব কারণে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে তার অন্যতম একটি কারণ হলো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন:-- ‘তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি, মানুষের কল্যাণেই তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করবে।’ 

(সূরা আল ইমরান, (৪), আয়াত, ১১০) 


আল্লাহ তায়ালা অন্যায়ের প্রতিবাদ করাকে মুসলিম জাতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করেছেন। যেকোনো অন্যায়ের সামনে নীরব ভূমিকা ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না, বরং নিজ সাধ্য ও সামর্থ্যরে আলোকে এসব অন্যায়-অপরাধের প্রতিবাদ করা এবং তা নির্মূলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাই ঈমান ও ইসলামের অপরিহার্য দাবি।


••• আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:---‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোনো অন্যায় হতে দেখলে যেন হাত দিয়ে তা প্রতিহত করে। যদি তা না পারে, তবে কথা দিয়ে; তাও না পারলে অন্তর দিয়ে (ঘৃণা করবে)। এটি ঈমানের দুর্বলতম স্তর।’ (মুসলিম, হাদিস, ৭৪)


••• আরেক হাদিসে হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি, ‘তোমরা অবশ্যই ভালো কাজে মানুষকে আদেশ দেবে এবং অবশ্যই অন্যায় থেকে নিষেধ করবে। যদি তা না করো তা হলে আল্লাহ তোমাদের ওপর তার পক্ষ থেকে শাস্তি প্রেরণ করবেন। এরপর তোমরা তার নিকট প্রার্থনা করলেও তিনি কবুল করবেন না’ 

                   (তিরমিজি, হাদিস, ৪০৬)। 

 অনেক সময় যুদ্ধ হওয়ার কয়েক মিনিট আগেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর কাছে মুসলিম হয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছেন এমন অনেক নজির রয়েছে। 

আল্লাহ তাঁয়ালা কখন কার মাধ্যমে কি খেদমত রেখেদিয়েছেন নিবেন বলে সেটা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেননা।

অনেক সময় দেখা যাই কোরআনের হাফেজ ও নাস্তিক হয়েছে  যাই, আবার  অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাই বিধর্মীদের ছেলে মুসলিম হয়ে  হাফেজ আলেম হয়ে যাই। আবার সেটারও  শেষ পর্যন্ত নামাজি ও তার শিক্ষা জ্ঞানকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত থাকবে কিনা সেটাতো ও থাকেনা কোনো গ্যারান্টি। 

সব কিছুর পরিবর্তন এক সেকেন্ডের বিষয়। আল্লাহর রাসূল (সা:) ঈমানের পথে অটল থাকার জন্য দোয়া করেছেন। 

আল্লাহ পাক ঈমানের পথে থাকার জন্য দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং নিজের ঈমানকে ধরে রাখার জন্য কারো ওয়াজ নসিহত ও কথায় নিজের মাঝে তাকওয়া আসে না, তাকওয়া আসবে নিজের আমল ও আল্লাহর ভয় ভীতি ও জবাবদিহিতার চিন্তার মধ্যে। 

আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের কি হয়েছে যে তোমরা মাটি আঁকড়ে পড়ে আছো? অসহায় নারী পুরুষের জন্য লড়ছো না? লড়াই কি ঢাল তলোয়ার গোলা বারুদ দিয়েই হয়?    দুটো কথা, দুই কলম লিখাতেও হয়।

 রাসূলুল্লাহ (সা:)এর সময়ে কবিতা লিখে উজ্জীবিত করতেন যে কবি সেও যুদ্ধে সাহায্যকারী হিসেবে স্বীকৃতি পেতো। 


*** আমাদের বাংলাদেশের জনতা যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা নিজেরদের বুকে ধারণ করে চলা ফেরা করি, আর এখন সকলেই একত্রিত হয়ে সমবেত হয়েছি গাজার মৃত্যুভয়হীন জনগণের পাশে, তাঁদের পাশে যাদেরকে আমরা শক্তিশালী ভাবি সে সমস্ত দেশ চাইলে  এতো মানুষ শহীদ হওয়ার আগেই সব কিছুর মীমাংসা করতে পারতো তাদের আদেষেই । কিন্তু তারা এতো কিছুর পর ও তাদেরকে নিজেদের লোভ ও স্বার্থের কারণে মুনাফিকদের আচরণ তাদের মধ্যে ও প্রকাশ করছে।

বর্তমানে এই সমাবেশ শুধু কোনো  প্রতিবাদের নয়, এটা  সমাজকে একটা সুন্দর মনমানুষিকা ও একটা ইতিহাসের হিসেবে আমাদের আগামী প্রজন্মের সামনে অন্যায়ের প্রতিবাদে কিভাবে একসাথে পথে নামতে হয় সেটার প্রমান রেখে যাওয়া। আমাদের সকলের পক্ষ থেকে জবাব, একটি একটি অঙ্গীকার, ও একটি শপথ।


••• এই পদযাত্রা ও গণজমায়েত থেকে আজ আমরা চারটি স্তরে আমাদের দাবিসমূহ উপস্থাপন করব-

আমাদের প্রথম দাবিগুলো জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি।

যেহেতু জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সকল জাতির অধিকার রক্ষার, দখলদারিত্ব ও গণহত্যা রোধের সংকল্প প্রকাশ করে।

এবং আমরা দেখেছি, গাযায় প্রতিদিন যে রক্তপাত, যে ধ্বংস চলছে, তা কোনো একক সরকারের ব্যর্থতা নয়—বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার ফল;

এবং এই ব্যর্থতা শুধু নীরবতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়,বরং পশ্চিমা শক্তিবলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদার ইজরায়েলকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে এই গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে;

এবং এই বিশ্বব্যবস্থা দখলদার ইজরায়েলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে  সেহেতু আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো দাবি জানাচ্ছি:

•• জায়নবাদী ইজরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে..

 •• যুদ্ধবিরতি নয় গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে..


•• ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে..


•• পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে;


••  ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা, এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে;


কারণ—এই মুহূর্তে বিশ্বব্যবস্থা যে ন্যায়ের মুখোশ পরে আছে,

গাযার ধ্বংসস্তূপে সেই মুখোশ খসে পড়েছে।


আমাদের দ্বিতীয় দাবিগুলো মুসলিম উম্মাহর নেতৃবৃন্দের প্রতি। 


যেহেতু—আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিন কেবল একটি ভূখণ্ড নয়—এটি মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের অংশ;

এবং—গাযা এখন কেবল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর নয়—এটি আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার বেদনাদায়ক প্রতিচ্ছবি;

এবং—উম্মাহর প্রতিটি সদস্য, প্রতিটি রাষ্ট্র, এবং প্রতিটি নেতৃত্বের উপর অর্পিত সেই আমানত—যা আল্লাহ প্রদত্ত ভ্রাতৃত্ব ও দায়িত্বের সূত্রে আবদ্ধ;


এবং—ইজরায়েল একটি অবৈধ, দখলদার, গণহত্যাকারী রাষ্ট্র—যা মুসলিমদের প্রথম কিবলা ও একটি পুরো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে;


এবং—ভারতের হিন্দুত্ববাদ আজ এই অঞ্চলে জায়নবাদী প্রকল্পের প্রতিনিধিতে পরিণত হয়েছে—মুসলমানদের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত দমন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে; 

এবং—ভারতে সম্প্রতি ওয়াকফ সম্পত্তি আইনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক অধিকার হরণ করা হয়েছে—যা উম্মাহর জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা;


*** সেহেতু  মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসি’র মত মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর নিকট দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই:


•• ইজরায়েলের সাথে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সকল সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে;


•• জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে;


•• গাযার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে;


••  আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইজরায়েলকে এক ঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে;


••  জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে;


কারণ—গাযার রক্ত প্রবাহে আমরা লজ্জিত হওয়ার আগেই, গাযার পাশে দাঁড়ানোই উম্মাহর জন্য সম্মানের একমাত্র পথ।

এবং—যে নেতৃত্ব আজ নিরব, কাল ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য হবে।


আমাদের তৃতীয় দাবিগুলো বাংলাদেশ সরকারের প্রতি-


যেহেতু—বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, যার স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তিতেই নিহিত রয়েছে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেতনা;


এবং—আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিনের প্রশ্নে বাংলাদেশ কেবল মানবতার নয়—ঈমানের পক্ষেও এক ঐতিহাসিক অবস্থানে আছে;


এবং—একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সরকারের দায়িত্ব, জনগণের ঈমানি ও নৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রাখা;

এবং—বাংলাদেশের জনগণ গাযার পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে, তাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিরবতা এই জনআকাঙ্ক্ষার প্রতি অবজ্ঞার শামিল;


*** সেহেতু  বাংলাদেশের সরকারের প্রতি দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই:


•• বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘Except Israel’ শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইজরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে..



•• সরকারের ইসরায়েলি কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে;


•• রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে;


•• সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে;


•• জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে, যেহেতু হিন্দুত্ববাদ আজ শুধু একটি স্থানীয় মতবাদ নয়—বরং আন্তর্জাতিক জায়নিস্ট ব্লকের অন্যতম দোসর;


•• পাঠ্যবই ও শিক্ষা নীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন, এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে 

হবে— যাতে ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্ম নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয় নিয়ে গড়ে ওঠে।


কারণ—রাষ্ট্র কেবল সীমানা নয়, রাষ্ট্র এক আমানত।

আর এই আমানত রক্ষা করতে না পারলে ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করে না।


আমাদের সর্বশেষ দাবিগুলো নিজেদের প্রটি যা মূলত একটি অঙ্গীকারনামা


যেহেতু—

আমরা বিশ্বাস করি, আল-কুদস কেবল একটি শহর নয়—এটি ঈমানের অংশ।


এবং—আমরা জানি, বাইতুল মাকদিসের মুক্তি অন্য কারো হাতে নয়—আমাদেরই কোন প্রজন্মের হাতে তা লেখা হবে।

এবং—আমরা বুঝি, জায়নবাদের প্রতিষ্ঠা মূলত আমাদের নিজেদের আত্মবিস্মৃতির ফল;


এবং—আজ যদি আমরা প্রস্তুত না হই, তাহলে আল্লাহ না করুন কাল আমাদের সন্তানেরা হয়তো এমন এক বাংলাদেশ পাবে—যেখানে হিন্দুত্ববাদ ও জায়নবাদ একত্রে নতুন গাজা তৈরি করবে।


এবং—গাযা আমাদের জন্য এক আয়না—যেখানে আমরা দেখতে পাই, কীভাবে বিশ্বাসী হওয়া মানে কেবল বেঁচে থাকা নয়, সংগ্রামে দৃঢ় থাকা;


সেহেতু—আমরা এই মাটির মানুষ, এই মুসলিম ভূখণ্ডের নাগরিক, এই কওমের সন্তান এবং সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহর সদস্য—একটি অঙ্গীকার করছি:--

 •• আমরা সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বয়কট করবো—প্রত্যেক সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে যারা ইজরায়েলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে;


•• আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করবো—যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সকল প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে, ইনশাআল্লাহ।


••  আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলবো—যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে;


••  আমরা বিভাজিত হবো না—কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না।

আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়।


আমরা শুরু করবো নিজেদের ঘর থেকে—ভাষা, ইতিহাস, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমাজ—সবখানে এই অঙ্গীকারের ছাপ রেখে।


আমরা মনে রাখবো:--

গাযার শহীদরা কেবল আমাদের দো‘আ চান না—তাঁরা আমাদের প্রস্তুতি চান।


শেষকথা:


শান্তি বর্ষিত হোক গাযার সম্মানিত অধিবাসীদের উপর—তাঁদের উপর, যাঁরা নজিরবিহীন সবর করেছেন, যাঁরা অবিচল ঈমানের প্রমাণ দিয়েছেন।


যাঁরা ধ্বংসস্তূপের মাঝেও প্রতিরোধের আগুন জ্বেলেছেন 

বিশ্বের নীরবতা ও উদাসীনতার যন্ত্রণা হাসিমুখে বুকের মাঝে ধারণ করেছেন।

শান্তি বর্ষিত হোক তাদের উপর, যাঁরা নাম রেখে গেছেন ইজ্জতের খতিয়ানে—


শান্তি বর্ষিত হোক হিন্দ রজব, রীম এবং ফাদি আবু সালেহ সহ সকল শহীদেরর উপর, যাঁদের রক্ত দ্বারা গাজার পবিত্রভূমি আরো পবিত্র হয়েছে, যাঁদের চোখে ছিল প্রতিরোধের অগ্নিশিখা।


শান্তি বর্ষিত হোক বাইতুল মাকদিসের গর্বিত অধিবাসীদের উপর, যাঁদের হৃদয়ে এখনো ধ্বনিত হয় ‘আল-কুদস লানা’, আল কুদস আমাদের!


গাজার জনগণকে অভিনন্দন—


আপনারা ঈমান, সবর আর কুরবানীর মহাকাব্য রচনা করেছেন।


দুনিয়াকে দেখিয়েছেন—ঈমান আর তাওয়াক্কুলের শক্তি...

আমরা, বাংলাদেশের মানুষ—শাহ জালাল আর শরীয়াতুল্লাহর ভূমি থেকে দাঁড়িয়ে, আপনাদের সালাম জানাই, আপনাদের শহীদদের প্রতি ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানাই,

আর আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় এই দো‘আ—

হে আল্লাহ, গাজার এই সাহসী জনপদকে তুমি সেই পাথর বানিয়ে দাও, যার উপর গিয়ে ভেঙে পড়বে জায়োনিস্টদের সব ষড়যন্ত্র।

বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষে থেকে আপনাদের জন্য এই দোয়া,

বাংলাদেশের সকল ভাইদের এই একতা বদ্ধকে  জানাই সম্মান ও শ্রদা। কারণ এখানে প্রতিটা চুক্তি ছিলো আমাদের ভাইদের রাজপথের উক্তি আমরা বোনেরা তো ঘর থেকে বের হয়ে তাদের সাথে পথ পাড়ি দিতে পারিনা, তবে আমরা আমাদের স্থানে থেকে সর্বদা আমাদের ভাইদের সফলতায় কামনা করি ও দোয়া করি।

কারণ আজকে যদি আমাদের এই ভাইয়েরা আমাদের বিপদগস্থা ভাইদের পাশে না থাকে আগামীতে আমাদের সন্তানেরা ও ভুলে যাবে রাজপথে!

আল্লাহ সকলকে এভাবেই একত্রিত রাখুন হোক সেটা রাজপথে বা কোন মতামতে,

আমীন।

Comments